একটানা দু'বছর, সময়টা নেহাত কম নয়! এ কোন 'সাজা' ভোগ করছে নাবালিকা! উত্তর নেই কারও কাছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছেও এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই। বাবার মৃত্যুর পর থেকে ধীরে ধীরে চারপাশের লোকজনগুলো যেন বড্ড অচেনা হতে শুরু করে। মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে নাবালিকা। বাড়িতে মা আছেন, বর্তমানে তিনিই মেয়ের দেখভাল করেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জুগিয়ে উঠতে পারেন না তিনি। উৎসবের মরশুমে মালদার চাঁচোলের এই ঘটনা মন খারাপ করে দেয়।
Advertisment
চাঁচোল ২ নং ব্লকের চন্দ্রপাড়া পঞ্চায়েত। এই এলাকার পুরাতন খান পুর ঘাট গ্রামের বাসিন্দা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাবালিকা রজনী খাতুন। বছর তেরোর মেয়েটির বাবা গোলাম ইয়াজদানি ছিলেন পেশায় শ্রমিক। ২০১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন পথ দুর্ঘটনার বলি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর আদরের ছোট্ট মেয়ের বয়স তখন ছিল মাত্র ৮।
বাবার মৃত্যুর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছিল খুদে মনে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করে ওই খুদে। বর্তমানে তার বয়স ১৩। পরিবারের দাবি, মেয়েটি নাকি যখন-তখন কাউকে কামড়ে দেয়, কখনও আবার পুকুরে ঝাঁপ দেয়।
মায়ের সঙ্গে রজনী।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হচ্ছিল যে বাধ্য হয়েই তাকে নাকি শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। মেয়ের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই অসহায় মায়ের। কারণ তাঁর বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। তিন দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে এখন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন রজনী আর তার মা। ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনওক্রমে সংসার চালাচ্ছেন মা। অভিযোগ, এতদিন অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি স্থানীয় প্রশাসনও।
আবাস তালিকায় নাম থাকলেও মেলেনি ঘর। তাঁদের রেশন কার্ডও নেই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হলেও সরকারি ভাতাও পায় না মেয়েটি। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে। শিকলবন্দি হয়েই রয়েছে কিশোরী। চাঁচোল ২ নং ব্লকের ডেপুটি সেক্রেটারি হারাধন সাহার কানেও বিষয়টি গিয়েছে। তিনি বলেন, "ঘটনার খবর পেয়ে বিডিও-র নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। ওঁদের সমস্তরকম সাহায্য করা হবে। মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হবে।"