সৃষ্টি আর চমক মিলেমিশে একাকার, চক দিয়েই তৈরি জগন্নাথের মূর্তি, শিল্পকর্মকে বিরাট স্বীকৃতি। চক দিয়েই তৈরি করেছেন একের পর এক চোখ ধাঁধানো সৃষ্টি। পাশাপাশি পেনসিলের সিসেই ফুটিয়ে তুলেছেন একটুকরো ভারতকে। তাক লাগানো প্রতিভায় সোনার ছেলের বিরাট স্বীকৃতি। তাঁর একের পর এক সেরার সেরা সৃষ্টি অবাক করেছে সকলকেই।
সৃষ্টিতেই লুকিয়ে রয়েছে চমক। আর মুহূর্তেই সেই চমক চমকে দিয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। ছোট কোন নতুন কিছু সৃষ্টি তাঁর কাছে ‘প্যাশন’। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক সেরার সেরা সৃষ্টি অবাক করেছে সকলকেই। অভাব ছিল ছোট থেকেই কিন্তু সৃষ্টি কখনই থেমে থাকেনি। একের পর এক তাক লাগানো শিল্পকর্ম চোখ জুড়িয়েছে সকলের। অবশেষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে পেনসিলের সিসেই একটুকরো ভারতকে তুলে ধরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের, দাঁতনের সঞ্জয় কুমার পয়ড়া। তার এই বিরল প্রতিভা ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এর স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিছু শিল্পকর্ম সত্যিই মানুষকে অবাক করে। আর সেই তাক লাগানো শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলেই সেরার সেরা স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত শিল্পী। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালীন সময়ে ঘরবন্দী থাকাকালীন লিফ আর্টের প্রতি ভালবাসা গড়ে ওঠে। আর তারপর থেকে একের পর এক সেরা সৃষ্টি অবাক করেছে লাখো মানুষকে। লিফ আর্টের পাশাপাশি পেনসিলের সিস থেকে শুরু করে চক সবেতেই ফুটিয়ে তোলেন সেরার সেরা শিল্পকর্ম।
পেশাগত ভাবে স্থানীয় এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার পয়ড়া। শিল্পমনস্ক এই শিক্ষকের নানা হাতের কাজ ইতিমধ্যেই তোলপাড় ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েও শিক্ষক সঞ্জয় কুমার পয়ড়া। উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে মানুষের। তার হাতের ছোঁয়ায় পাতার উপরে ফুটে উঠেছে নানা মনীষী, থেকে শুরু করে সেরা ব্যক্তিত্ব। কে নেই সেই তালিকায়? সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে শুরু করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ। তাঁর হাতের এই জাদু হাজার হাজার মানুষের মন জয় করেছেন।
পেশায় শিক্ষক হলেও তিনি তাঁর শিল্পকলার মধ্যে লিফ কার্ভিংয়ের এই কাজ শুরু করেছিলেন করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময় ২০২০ সাল থেকে। ধীরে ধীরে ধৈর্য ধরে চলে পাতার উপর নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজ। এই সুক্ষ্ম কাজ করার জন্য তাঁকে দীর্ঘ সময় দিতে হয় এই শিল্পকলার পিছনে বলেই জানালেন শিল্পী।
কীভাবে শুরু করলেন এমন দুর্দান্ত শিল্পকলা? উত্তরে শিল্পী জানিয়েছেন,“ছোটবেলা থেকে আর্ট এর প্রতি একটা অগাধ টান ছিল তবে প্রথাগত আর্টের দিকে না ঝুঁকে আমি একটু আলাদা রকম করাই চেষ্টা করেছিলাম। পেন্সিল ও তুলির মধ্যে নিজের কল্পনা শক্তিকে সীমাবদ্ধ করে রাখিনি। লকডাউন চলাকালীন একদিন মোবাইলে চিনের জনৈক শিল্পীকে পাতা কেটে মানুষের প্রতিকৃতি বানাতে দেখি। তার থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি পাতা কেটে প্রতিকৃতি (লিফ আর্ট ) বানানোর চেষ্টা করি। এরমধ্যে বহু মনীষী, কবি, সাহিত্যিক কলেজের প্রিন্সিপাল, স্কুলের শিক্ষক, বিজ্ঞানী এবং শিল্পী রয়েছেন। প্রায় ৮০ এর অধিক মানুষের প্রতিকৃতি আমি বানিয়েছি। পাশপাশি পেনসিলের সিস, চকেও ফুটিয়ে তুলেছি নিজের শিল্পের বেশ কিছু নমূনা। এর জন্য আমার নাম ম্যাজিক বুক অব রেকর্ড, ইন্টারন্যাশনাল বুক অব রেকর্ড, কালামস ওয়াল্ড রেকর্ড, ইন্ডিয়া প্রাউড বুক অফ রেকর্ড,ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস, ন্যাশনাল বুক অব রেকর্ডস,ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইন্ডিয়া’তে নথিভুক্ত হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা পুরস্কার এবং কিছু জাতীয় স্তরের আর্ট কম্পিটিশনে ব্রোঞ্জ পদক জয়লাভ করেছি। আমারই শিল্পকর্মের বহু জায়গায় প্রদর্শনও হয়েছে”।
সঞ্জয় জানিয়েছেন, ‘নতুন কিছু সৃষ্টির খিদে সব সময় আমাকে যেন তাড়া করে বেড়ায়। শুরুর দিকে মাইক্রো আর্টের প্রতি তেমন কেউ আগ্রহ না দেখালেও বর্তমানে এই আর্ট এর প্রতি অনেকেই ভালোবাসা দেখিয়েছেন। যদিও বরাবরই আমার বাবা-মা ভাই, আমার স্ত্রী এবং আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু আমাকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকার দরুন এই ধরণের আর্টের বিষয়ে মানুষ সেভাবে জানেন না। তাই এই স্বল্প পরিচিত দিয়েই অদ্বিতীয় শিল্পকলাকে আমি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। আমি চাই কল্পনার সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে এই নতুন শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রকৃত শিল্পের পুষ্টিকরণ ঘটুক। এই শিল্পকর্মে নবাগত শিল্পীরাও আগ্রহ দেখাক”।