বাংলায় মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকই স্ব-নির্ভর হয়েও উঠেছেন। তাই ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলার গয়না বড়ি উপহার দিতে চান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের বল্লুক গ্রামের মহিলারা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গয়না বড়ি এতটাই বিখ্যাত যে সম্প্রতি তার জন্য জিআই তকমার আবেদনও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, কোনও নির্দিষ্ট জায়গার কোনও একটা নির্দিষ্ট জিনিস বিখ্যাত হলে, তার জন্য জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন বা জিআই-এর আবেদন করা হয়।
শীতের শুরুতেই তাই সকাল থেকেই বাড়ির উঠোনে বিউলির ডাল দিয়ে গয়না বড়ি তৈরি করছেন মহিলারা। তাঁদের এই প্রয়াসে পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্যা মামণি জানা। এলাকার মহিলাদের পাশাপাশি তিনিও হাত লাগিয়েছে গয়না বড়ি তৈরিতে। তৃনমূলের প্রতীক চিহ্ন থেকে শুরু করে ফুলের নক্সা, বিভিন্ন রকমের বড়ি তৈরির কাজ করে চলেছেন তাঁরা। মূলত সুজি, পোস্ত, মুগ ডালের মিশ্রণেই এই বড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘সবুজ বনে’ গড়ে উঠছে জীবন্ত এক মিউজিয়াম
মামণি দেবী জানা জানান, "বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নক্সা বা গয়না বড়ি। সেই নক্সা বড়ি বর্তমান সময়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবেশ ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রী পরিষদ খুব ভাল কাজ করছেন। মহিলারা আজ রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। তাই তাঁদের হাতে ইংরেজী নতুন বছরের উপহার হিসাবে তৃণমূলের প্রতীক নক্সা বড়ি সহ নানা ধরনের বড়ি তুলে দিতে চাই।
"ইতিমধ্যে এলাকার কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে তৃণমূলের প্রতীক নক্সা বড়ি সহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ধনের বড়ি তৈরি করেছি। সেগুলি সময় ও সুযোগ বুঝে তাঁদের হাতে তুলে দিতে চাই। সেই সাথে জেলা পরিষদের সভাপতির হাতেও তুলে দিতে চাই। জেলায় যাতে নক্সা বড়ির কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে।"
স্থানীয় শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মণ জানান, "এলাকার গৃহবধূ তথা জেলা পরিষদের সদস্য মামণি জানা, ইংরেজী নতুন বছরে এলাকার মহিলাদের নিয়ে তৃণমূলের প্রতীক নক্সা বড়ি সহ নানা ধরনের বড়ি তৈরি করেছেন। সেগুলি এলাকার মানুষ, আত্মীয় পরিজনদের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী সহ জেলার অন্যান্য আধিকারিকদের হাতে তুলে দিতে চান। এলাকার মহিলাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তাঁদের চিন্তাভাবনা যাতে সফল হয় তাঁর জন্য তাঁদের পাশে থাকবো।"
শিক্ষাবিদ হরিপদ মাইতি জানান, "গহনা বড়ি জেলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রশাসনের তরফ থেকে জিআই তকমার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। খুব ছোট থেকেই দেখে আসছি, শীতকালের শুরুতে বাড়ির উঠোনে মা, ঠাকুমা সহ বাড়ির মহিলারা এক জায়গায় জড়ো হয়ে বড়ি তৈরি করতেন। আর সেই বড়ি শুধু বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। ভিন রাজ্যের আত্মীয়দের কাছে পাঠানো হত। সেই প্রাচীনকাল থেকে একইভাবে ঐতিহ্যের সাথে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় গহনা বড়ি বা নক্সা বড়ি।"