দেড় মাস আগে সৌদি আরবে মৃত্যু হয়েছিল নদিয়ার পরিযায়ী শ্রমিক সিদ্দিক খানের। কীভাবে এদেশে ফিরিয়ে আনা হবে তাঁর কফিনবন্দি দেহ তা নিয়ে চিন্তায় ঘুম ছুটেছিল পরিবারের সদস্যদের। অনেকের দ্বারস্থ হলেও কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। মুসকিল আসান করলেন বীরভূমের সাদিকুল ইসলাম। টানা আবেদন-নিবেদনের পর শুক্রবার রাতে নদিয়ার করিমপুর ব্লকের দীঘলকান্দি গ্রামে ফিরল সিদ্দিক খানের কফিনবন্দি দেহ। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে সংস্থা থেকে বকেয়া অর্থও মিলেছে।
সৌদি আরবের একটি পাথর কোম্পানীতে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন নদিয়ার মুরুটিয়া থানার দীঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক খান। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি সৌদির রিয়াধে ছিলেন। করোনা আবহে ২৮ অগাস্ট সৌদিতে মৃত্যু হয় সিদ্দিক খানের (৪০)। এই খবরে অভাবের পরিবার মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য সমাজসেবী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি সবার কাছে ছুটে যান স্বামীহারা স্ত্রী ও তাঁর পরিবার। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি বলেই পরিবারের সদস্যদের দাবি। বরং তাঁদের হতাশা আরও বেড়ে যায়। প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার যোগার, তখনই বীরভূমের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ওই পরিবারে ফোন আসে সাদিকুল ইসলামের। সাদিকুলের কথায়, "সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টা জানতে পারি। তারপর স্থানীয় বিডিওকে ফোন করে ওই বাড়ির সমস্ত তথ্য জেনে নিই। মৃত সিদ্দিক খানের বাড়িতে ফোন করে পুরো বিষয়টা জানার চেষ্টা করি।"
সিদ্দিক খান।
মৃতের স্ত্রী ও দুই সন্তান রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের পাশাপশি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে দেহ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একাধিকবার আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। ওই অসহায় পরিবাবের পাশে দাঁড়িয়ে সাদিকুল সরাসরি ইমেল ও ফোন মারফৎ যোগাযোগ করেন সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। এখানেই থেমে থাকেননি সাদিকুল। সৌদিতে যে সংস্থায় সিদ্দিক খান কাজ করতেন সেখানকার উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে অনুরোধ করে উক্ত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ সাহায্য করারও দাবি জানান। সাদিকুল বলেন, "আশ্বাস মেলে সৌদি আরবে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে। তিনি জানান, ভারত সরকারের মাধ্যমে স্থানীয় জেলাশাসক মারফৎ সেই অর্থসাহায্য পৌঁছে যাবে মৃতের পরিবারের কাছে। শেষমেশ ৯ অক্টোবর কফিনবন্দি দেহ ভারতে ফিরবে বলেও জানানো হয়।"
শুক্রবার রাতে সৌদি থেকে উড়ানে দমদম নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিদ্দিকের কফিনবন্দি দেহ আসে। সেখানেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাজির ছিলেন সাদিকুল। বিমান বন্দরে ছাড়পত্র পেতে অনেকটা সময় লেগে যায়। সকালে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় দেহ। সিদ্দিকের স্ত্রী পিঞ্জুরা বেগম ও পরিবারের সদস্যরা সাদিকুলের এই প্রচেষ্টায় মোহিত। সাদিকুলের বক্তব্য, "সাধারণ মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে সমম্বয়ের অভাবে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন