রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডি'র জালে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এতেই চাপ বাড়ছে মমতা মন্ত্রিসভার অন্যন্য মন্ত্রীদের? দমকলমন্ত্রী সুজিত বোসের মন্তব্যে এই ধারণাই তীব্র হচ্ছে।
দমকলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নির্দেশে যার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বোস। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, এই দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কোমর বেঁধেছে। এসবের মধ্যেই শনিবার দলীয় এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সুজিত বোস বলেছেন, 'আমার আপ্তসহায়ক নিতাই দত্ত। সবাই জানে নিতাই এখন কাউন্সিলর হয়েছে, পরে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে। তার বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে পাঠিয়ে দেওয়া হল, ১২ ঘন্টা জেরা তাকে করা হলো ওকে। ওঁর বাড়ি থেকে কিছু পেল না। কিন্তু বলতে হবে একটাই নাম সুজিত বোসের নামটা। সুজিত বোসের নামটা তুমি লিখে দাও তোমাকে ছেড়ে দেবো।' অর্থাৎ, জেরার নামে তাঁর ঘনিষ্ঠকে চাপ দিয়ে নাম বলিয়ে তাঁকে বিপাকে ফেলাই যে ইডি, সিবিআই আধিকারিকদের উদ্দেশ্য সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন মন্ত্রী সুজিত বোস।
কী বলেছেন সুজিত বোস?
১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার কেন্দ্রীয় অর্থ না পাওয়ার অভিযোগে এদিন তাঁর এলাকায় পথে নেমেছিল তৃণমূল। সেখানেই বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী সুজিত বোস। কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ পদক্ষেপের অভিযোগ তোলন।
সুজিত বোস বলেন, 'লড়াই সংগ্রাম করলেই আমাদের নেতৃত্বদের নানাভাবে হ্যারাসমেন্ট করছে ওরা।কাউকে জেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কাউকে ইন্টারোগেশন করা হচ্ছে। ৬ মাস বাদে যখন দেশে সাধারণ নির্বাচন তার আগে সব বিরোধী নেতাদের জেলবন্দি রাখবার চেষ্টা করছে। আজকে ওরা আমাদের বিভিন্ন নেতাদের অ্যারেস্ট করছে। আমি বলছি কোনও নেতা যদি দোষ করে তাহলে নিশ্চয়ই তাঁদেরকে অ্যারেস্ট করুক। কিন্তু অনেকের দোষ না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে নানাভাবে শুধু অ্যারেস্টই করছে না, তল্লাশির নামে এমন জোর করছে যে তাঁদেরকে অসুস্থও করে দিচ্ছে।'
এরপরই দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্ত-র বাড়িতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তল্লাশির বিষয়টি তুলে ধরেন সুজিতবাবু। বলেন, 'আমার আপ্তসহায়ক নিতাই দত্ত, সবাই জানে নিতাই কাউন্সিলর হয়েছে, পরে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে। তাঁর বাড়িতে ইডি-কে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ১২ ঘন্টা ধরে তল্লাশি, জেরা করা হল ওকে। ওঁর বাড়ি থেকে কিছু পেল না। কিন্তু বলতে হবে একটাই নাম, সুজিত বোসের নামটা তোমরা বলে দাও, সুজিত বোসের নামটা তুমি লিখে দাও, তোমাকে ছেড়ে দেব। এটা কোন ধরণের অত্যাচার?'
নিজে দমকলের কোনও নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে এদিন মঞ্চেই দাবি করেছেন সুজিত। বলেছেন, 'সুজিত বোসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ৪২ বছরের। সুজিত বোসের এত খারাপ অবস্থা হয়নি যে আমাকে টাকার বিনিময়ের লোককে চাকরি দিতে হবে। জীবনে এই কাজ আমি কোনওদিন করিনি। যতই ওকে (নিতাই দত্ত) মেরে ফেলুন কেটে ফেলুন, যতই ওকে (নিতাই দত্ত) জেলে আটকান, কোনওদিনও ও বলবে না সুজিত বোস এই কাজ ওকে করতে বলেছে।'
পুজোর ঠিক আগে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি-র গোয়েন্দারা। ভোর ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে নিতাইকে জেরা করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। নিতাই মন্ত্রী সুজিত বোসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শুরুতে নিতাই দত্ত ছিলেন সুজিতের আপ্তসহায়ক। পরে দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর ও ভাইস- চেয়ারম্যান হন।