রাজ্যের সব জেলার উৎকৃষ্ট মিষ্টি যাতে একই কেন্দ্র থেকে মেলে সেই লক্ষে বর্ধমানে তৈরি হয়েছিল মিষ্টি হাব। পুরোটাই মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। কিন্তু, বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ সেই মষ্টি হাব। ফলে নিরাশ হতে হয় মন্ডা-মিঠাই প্রেমীদের। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
গত ২৮ এপ্রিল প্রশাসনিক বৈঠকে মিষ্টি হাবের দুরাবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিষ্টি হাব পুনরায় চালুর জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পর শুক্রবার জেলা শাসকের দফতরে বর্ধমানের বামচাঁদাইপুরের মিষ্টিহাব পুণরায় চালুর জন্য বৈঠকে বসেন প্রশাসনের কর্তারা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ব্যবসায়ীদের ১৫ দিনের মধ্যে মিষ্টি হাবের দোকান খুলতে বলা হবে। দোকান না খুললে প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত মিষ্টি হাব স্বনির্ভর
গোষ্ঠির হাতে তুলে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মিষ্টি হাব নিয়ে এদিনের বৈঠকে জেলা শাসক প্রিয়াংকা সিংলা ছাড়াও পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, বিধায়ক নিশীথ মালিক,জাতীয় সড়কের প্রতিনিধি,পরিবহন দফতরের আধিকারিক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা বলেন, 'মিষ্টি হাবে সরকারি বাস দাঁড় করানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিষ্টি হাবের সামনে বাস থামানোর জন্যেও বেসরকারি বাস মালিকদের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে। জাতীয় সড়ক থেকে মিষ্টি হাবে বাস ঢোকার জন্য কাটিংয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।'
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বর্ধমানের মিষ্টি হাব। ২০১৭ পূর্ব বর্ধমানের ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বামচাঁদাইপুরে নির্মিত মিষ্টি হাবের উদ্বোধন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে তৈরি সেই মিষ্টি হাব চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে। দোকান পাট চালু হলেও জমেনি ব্যবসা। দিনের পর দিন লোকসানে চলায় মিষ্টির হাবের দোকানগুলির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও জেলাপ্রশাসন মিষ্টি হাবকে সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু কোন দাওয়াই কাজে লাগে না। শেষমেস মিষ্টি হাবের নীচের তলার দশটি ও দোতলার ১৫ টি দোকান ঘরে তালা পড়ে যায়। গত ২৮ এপ্রিল রাজ্যের বিভিন্ন জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানের মিষ্টি হাব নিয়ে খোঁজ খবর নেন। মিষ্টি হাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে শুনে হতাশ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ধমক দেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলাকে। মিষ্টি হাব দ্রুত চালুর নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে এদিন বৈঠকে বসেছিল জেলা প্রশাসন।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, 'সরকারি অনুষ্ঠানে টিফিনের জন্য এখন থেকে মিষ্টি হাব থেকে মিষ্টি নেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে সব ব্যবসায়ীকে মিষ্টি হাবের দোকান খুলতে হবে।' সীতাভোগ, মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা দোকান খুলতে আগ্রহী। কিন্তু লোকসান ঠেকাতে হবে।
বছর তিনেক আগে মিষ্টি হাবে মেলার আয়োজন করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তাতেও কোন সুরাহা হয় নি। তাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন এত বৈঠক, মুখমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি তবুও মিষ্টি হাব আদৌ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো?