তৃণমূলে প্রবীণ-নবীন বিতর্ক চরমে। তার মাঝেই ফের চর্চায় দলের প্রবীণ বিধায়ক ও সাংসদের আকছাআকছি। ফের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাঁচাছোলা নিশানা করলেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। রোষের সূত্রপাত দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে করা সুদীপর 'ছাগলের তৃতীয় সন্তান' মন্তব্যের প্রেক্ষিতে। তাপস এ দিন প্রকাশ্যেই দলীয় নেতৃত্বের কাছে বিচার দাবি করেছেন।
কী বলেছেন তাপস রায়?
'নিশ্চয়ই ভাবতে হবে আমাকে'
তৃণমূলে প্রায়ই সুদীপ-তাপস দ্বৈরথ প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন বছরের শুরু থেকে যা অন্য মাত্রা পেয়েছে। বুধবার তাপস রায় বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তৃণমূল করি। কিন্তু যদি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুষ্ট করে যদি চলতে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই ভাবতে হবে আমাকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমি দল করি নাকি? আমাদের দলে তো ছয়-সাত বছর ছিল না ও! বলেছিল, দলটা নাকি উঠে যাবে! ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে কী কী করেছিল, আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে আবারও তুলব। যারা দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, শীঘ্রই চিহ্নিত করা হবে। যারা মমতাপন্থী, যারা তৃণমূলপন্থী, যারা অভিষেকপন্থী, সুদীপ তাদের পছন্দ করে না।'
'বিচার হোক'
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতা তৃণমূলের সভাপতি। তাপসেরও উত্থান উত্তর কলকাতা থেকেই। ফলে ক্ষমতার দ্বৈরথ রযেছে সাংস- বিদায়কের। এদিন তাপস দাবি করেছেন যে, তাঁকে বাদ দিয়ে উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের মতো কিছু একটা করতে চাইছেন। তাঁর কথায়, 'নিজের মতো করে উত্তর কলকাতার সাতটি ওয়ার্ডে নিজের মতো করে কিছু করতে চাইছে ও। আমাকে ডাকবে না বলে, কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড সভাপতিদের নিষেধ করে দেয়। ওর থেকে বেশিদিন তৃণমূল করছি। হিসেবে মাঝের ছ'-সাত বছর বাদ দেওয়া হোক, যে সময় ও ছিল না দলে। ১৫ বছর ধরে আমার উপর যে অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার হয়েছে, যে অসভ্যতা, অসম্মানের শিকার হয়েছি, তার বিচার হোক।'
ফের 'সাদা হাতি' কটাক্ষ
২০২২ সালের পুজোর পর সুদীপ-তাপস দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছিল। সাংসদের বিজেপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানিয়ে ছিলেন বরাহনগরের বিধায়ক। তার প্রেক্ষিতেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'হাতি চলে বাজার… কী একটা কথা আছে না? নো কমেন্টস। অনেকে বলছেন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। বিজেপির কোনও ছোট নেতার সঙ্গে আমার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করার প্রয়োজন নেই। আমি যখন দিল্লিতে যাই, সর্বদলীয় বৈঠকে আমার সামনে নরেন্দ্র মোদী বসেন। মোদীর পাশে বসে সংসদ করি। আমি তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করি। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসি। হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার।'
যার পাল্টা তাপস রায় সুদীপকে 'সাদা হাতি' বলে কটাক্ষ করেছিলেন। এদিন ফের তারই পুনরাবৃত্তি করলেন তৃণমূলী রাজনীতিতে অভিষেক শিবিরের বলে পরিচিত তাপস রায়। বললেন, 'ও (সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) নিজেকে হাতি ভাবে, কিন্তু ও মোটেই হাতি নয়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলতেন দেখ দেখ, কেমন পেঙ্গুইনের মতো হেঁটে আসছে। আর যদি হাতি হয়ও, সেটা সাদা হাতি, অনুৎপাদক সবক্ষেত্রে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি, কারও এত ঔদ্ধত্য, স্পর্ধা এবং ক্ষমতা নেই। আমি যে আজও দলটা করি, তা-ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে।'
তাপসের পাল্টা সুদীপের তরফে এখনও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।