/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/hiranandani-mohua-moitra.jpg)
ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দদানি ও তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিতর্ক নয়া মাত্রা পেল। বিজেপির তোলা অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি। বৃহস্পতিবার সংসদীয় এথিক্স কমিটির কাছে হলফনামা জমা দিয়েছেন দুবাইস্থিত ওই ব্যবসায়ী। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে নিজের স্বপক্ষে প্রশ্ন তুলতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়াই তাঁকে নিজের সংসদের লগইন ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন।
পাল্টা মুখ খুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। হীরানন্দানির দাবিকে 'একটা মশকরা' বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। বলেছেন, 'হলফনামার বয়ান খসড়া করে পিএমও-এর তরফে পাঠানো হয়েছিল, যাতে হীরানন্দানি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন।'
বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির কাছে জমা দেওয়া তিন পাতার হলফনামা যা রয়েছে সেটি হীরানন্দানি গ্রুপ কর্পোরেট কমিউনিকেশন টিম সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছে। দুবাইতে বসবাসকারী দর্শন হীরানন্দানি বলেছেন, 'মৈত্র মনে করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের একমাত্র উপায় ব্যবসায়ী গৌতম আদানি এবং তাঁর গোষ্ঠীকে নিশানা করা। কারণ উভয়ই তাঁরা গুজরাটের বাসিন্দা।'
হীরানন্দানি তাঁর হলফনামায় বলেছেন, 'আদানি গোষ্ঠীকে বোরে করে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করা যাবে এমন সব প্রশ্ন তিনি তৈরি করে সংসদে তোলায় বিষয়টি স্থির করেছিলেন। আদানি গোষ্ঠীকে আক্রমণের জন্য তাঁকে সমর্থন করাতে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন মহুয়া। তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে আমার সঙ্গে তাঁর ইমেল আইডি শেয়ার করেছেন, যাতে আমি তাঁকে তথ্য পাঠাতে পারি এবং তিনি সংসদে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন তুলতে পারেন। আমি তার প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলাম।।'
হীরানন্দানির হলফনামায় দেওয়া বক্তব্য সামনে আসতেই সরব মহুয়া মৈত্র। 'জয় মা দুর্গা' লিখে এক্স হ্যান্ডলারে নিজের প্রেস বিবৃতি শেয়ার করেছেন তিনি। বৃস্পতিবার গভীর রাতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, মৈত্র ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে 'প্রিয় বন্ধু' সম্বোধন করে দাবি করেন, 'ওদের সমস্ত ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল যে তাঁরা শেষ হয়ে যাবে, সিবিআই তল্লাশি চালাবে ও সরকারের কাজও করতে পারবে না। ওদেরও পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কের কাজও বন্ধ করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিল মোদী সরকার।' কেন ব্যবসায়ীর দেওয়া হলফনামা সাদা কাগজে রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া।
Jai Ma Durga. pic.twitter.com/Z2JsqOARCR
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) October 19, 2023
এরপর ১৬অক্টোবর তারিখের একটি প্রেস রিলিস প্রকাশ করে হীরানন্দানি গ্রুপ দাবি করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ 'ভিত্তিহীন'।
গত মঙ্গলবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হীরানন্দানি গোষ্ঠী বলেছিল, 'আমরা ব্যবসায়ী, সবসময় ব্যবসায়তেই আছি। রাজনীতির ব্যবসায় নয়। আমাদের গোষ্ঠী সর্বদা সরকারের সঙ্গে দেশের স্বার্থে কাজ করেছে এবং তা চালিয়ে যাবে।' নিজের হলফনামায়, হীরানন্দানি আরও দাবি করেছেন যে, মৈত্র সুচেতা দালাল সহ অন্যান্য লোকের কাছ থেকেও সাহায্য পেয়েছিলেন, যাঁরা তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত ধরণের অযাচাইকৃত তথ্য সরবরাহ করেছেন। দিয়েছিলেন গৌতম আদানি এবং তাঁর কোম্পানির খবরও।
গত রবিবার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র লোকসভায় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রশ্ন করেছেন। অর্থাৎ টাকা ও উপহারের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া। তাই তাঁর লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন নিশিকান্ত। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লোকসভার এথিক্স কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। ২৬ অক্টোবর কমিটি তলব করেছে নিশিকান্ত ও মহুয়ার প্রাক্তন 'বন্ধু' জয় অনন্ত দেহাদরাইকে। আইনজীবী দেহাদরাই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন।
দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে তোলপাড় ফেলা অভিযোগ উঠলেও এখনও সেভাবে তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।