আদালতের নির্দেশে মাঝেমধ্যেই রাজ্যের স্কুলগুলিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-গ্রু-ডি কর্মীদের চাকরি যাচ্ছে। মূলত টাকার বিনিময়ে বা দুর্নীতি করে পাওয়া চাকরিই বাতিল করছে কোর্ট। নতুন করে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও বিশবাঁও জলে। এমনই এক পরিস্থিতিতে মহাফাঁপড়ে পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের নিরোলের কনকলতা জুনিয়র গার্লস স্কুল। কোনও উপায় না পেয়ে 'ভাড়া' করা দুই শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
এই স্কুলের তিনশোরও বেশি ছাত্রীকে পড়ানোর দায়িত্ব এমনিতেই সামলাচ্ছিলেন দুই স্থায়ী শিক্ষিকা। তবে শুধুমাত্র স্থায়ী এই দুই শিক্ষিকাকে দিয়ে স্কুল আর চলছে না। প্রয়োজন আরও শিক্ষক-শিক্ষিকার। স্থানীয়দের অনেকে জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যায় শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। ঘোর উদ্বেগে রয়েছেন এই স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা।
জানা গিয়েছে, কেতুগ্রামের নিরোল কনকলতা জুনিয়র গার্লস স্কুলটি ২০১০ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠন হয় এই স্কুলে। প্রথম দিকে স্কুল ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় কয়েক বছর যেতে না যেতেই। শিক্ষিকার অভাব তৈরি হয়। স্কুলের ৩১৭ জন ছাত্রীকে পড়ানোর সমস্যা এখন প্রকট আকার নিয়েছে। শিক্ষিকার অভাবে ছাত্রীদের সঠিকভাবে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সবথেকে অবাক করার বিষয় তা হল, নতুন সেশন শুরু হওয়ার পর থেকে আজ অবধি এই স্কুলে অঙ্কের ক্লাসই নেওয়া যায়নি। বাকি বিষয়গুলির ক্লাসও হয় নামকাওয়াস্তে!
আরও পড়ুন- পাহাড়-বনধ মানবেন না মমতা, কথা না শুনলে ফল ‘মারাত্মক’, বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রী
এক ক্লাসে পড়া দিয়ে দুই শিক্ষিকাকে অন্য ক্লাস সামলাতে ছুটতে হয়। এইভাবে সব ক্লাসে নিয়মিত পড়ানো সম্ভব হয় না। কোনও কোনও দিন টিফিনের পরে মিড ডে মিল খাইয়েই ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়। তাতেও দুর্দশার এখানেই শেষ নেই। এই স্কুলের দুই শিক্ষিকাই স্কুল শুরু ও ছুটির ঘন্টা বাজানোর দায়িত্ব সামলান।
স্কুলের এমন দুর্দশার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দুই স্থায়ী শিক্ষিকা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাজলক্ষী মণ্ডল বলেন, 'স্কুলে শিক্ষিকার অভাবের কথা জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরে বহুবার জানিয়েছি। সুরাহার জন্য গ্রামবাসী ও অভিভাবকরাও নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
কিন্তু সুরাহার কোনও ব্যবস্থা আজ অবধি হয়নি। তাই স্কুলে পঠনপাঠন জারি রাখার স্বার্থে এলাকার দুই শিক্ষিত যুবক- যুবতীকে সামান্য মাসোহারা দিয়ে ছাত্রীদের পড়ানোর জন্য রাখতে হয়েছে। অবিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
আরও পড়ুন- ‘টাকায় কেনা চাকরি’ বাতিল হাইকোর্টের, Goup-D কর্মীরা এবার শীর্ষ আদালতে
টাকার বিনিময়ে স্কুলে পড়াতে আসার কথা স্থানীয় যুবক জয়ন্ত গুই স্বীকারও করে নিয়েছেন । এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা। কেতুগ্রাম চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক কুন্তল দত্ত অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি
জানিয়েছেন, এই স্কুলটিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। তবে এখনও তাঁদের নিয়োগ করা হয়নি। যদিও টাকার বিনিময়ে স্কুলের পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য কাউকে রাখার ব্যাপারে তিনি আপত্তির কথা শুনিয়েছেন। মহকুমা শাসক অর্চনা পি ওয়াংখেড়ে
স্কুলটির দুর্দশার কথা শুনে বলেন, 'আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানাব। টাকার বিনিময়ে স্কুলে শিক্ষক রাখার বিষয়টি নিয়েও খোঁজ নেব।'