অর্থ উপার্জনের তাড়নায় যাদের বাড়ি থেকে বেড়তে হচ্ছে, তারাই বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। আনলক পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ সংক্রমিতের বয়সসীমাই ১৬ থেকে ৪৫ বছরের ভেতর। সংক্রমিতদের বেশিরইভাগই পুরুষ।
স্বাস্থ্য দফতরের মোট ১৮,৫৪১ নমুনার উপর সমীক্ষায় করেছে। দেখা গিয়েছে যে, সংক্রমিতদের ৫৬.৫ শতাংশের বয়স ১৬-৪৫ বছর। ২৯.৩ শতাংশ সংক্রমিতের বয়সসীমা ১৬-৩০ বছরের মধ্যে। ৩১-৪৫ বছর বয়সী সংক্রমিত রয়েছেন ২৭.২ শতাংশ। তুলনায় ৪৬-৬০ বছরের বয়স্কদের আক্রান্তের হার কম। এই বয়সী আক্রান্তের হার ২৩.৭ শতাংশ। ৬১-৭৫ বছর বয়সের মানুষদের ১২.৯ শতাংশ ভাইরাস সংক্রমণ ঘটছে। ১৬ বছর অবধি বা ৭৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংক্রমিতের হার যথাক্রমে ৩.৭ ও ৩.২ শতাংশ।
রাজ্যের সিংহভাগ সংক্রমণ ঘটছে কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, 'আনলকের পরেই সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে তার প্রমাণ এই সমীক্ষার ফলাফল। কাজের প্রয়োজনে ১৬-৬০ বছর বয়সীদের বেশি বাড়ি থেকে বেড়তে হচ্ছে। এই এই বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। আর যেহেতু কাজের জন্য কলকাতায় এই চার জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসেন তাই সংক্রমণের হার এখানে বেশি।'
বিশিষ্ট সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ সুমন পোদ্দারের কথায়, 'শিশু ও বয়স্করা বাড়ি থেকে বেশি বেরচ্ছেন না, ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম। কিন্তু কাজে বেরতে হচ্ছে ১৬-৬০ বছর বয়সীদের। সংক্রমিতও হচ্ছেন তারা বেশি।' সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সংক্রমিতদের মধ্যে ৭১ শতাংশ পুরুষ ও ২৯ শতাংশ মহিলা। ডাঃ পোদ্দারের কথায়, 'একাংশের মানুষ সতর্কতা অবলম্বন না করেই রাস্তায় বেরচ্ছেন। দেখা গিয়েছে তাদের মধ্যেই আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সব থেকে বেশি।'
মহামারী বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, 'সমীক্ষায় প্রমাণিত ভাইরাস ভ্রাম্যমান নয়, বরং যারা বাইরে বেরচ্ছেন তারাই সংক্রমিত হচ্ছেন। এই সমীক্ষা যখন হয়েছে তখন ভিন রাজ্য থেকে বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। তারাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। রিপোর্টেও তাই প্রতিফলিত হয়েছে।'
সংক্রমণ রুখতে বিক্ষিপ্ত লকডাউন লাগু করেছে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে দুই চিকিৎসকের মতামত হল যে, এতে জীবাণু ছড়ানোর হার কিছুটা কমলেও সংক্রমণ ঘটবেই। ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, 'সাবধানতা অবল্মবন করতেই হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরার পাশাপাশি পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।'
স্বাস্থ্য বিধি মানুষ মানছে কিনা তার নজরদারি কড়া করতে হবে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ আধিকারিক। তিনি বলেছেন, 'নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা দেখভালে কঠোর হতে হবে। না হলে কম বয়সীদের ভয়াবহ পরিণতি ঠেকানো যাবে না।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন