scorecardresearch

অনন্য নজির, মেয়ের অনুপ্রেরণায় একসঙ্গে মাধ্যমিকে মা ও ছেলে

স্বাদপূরণ

Mother and son in Madhyamik together under inspiration of daughter in Burdwan saktigar, মেয়ের অনুপ্রেরণায় একসঙ্গে মাধ্যমিকে মা ও ছেলে বর্ধমানের শক্তিগড়ে
মা আয়েশা বেগমের সঙ্গে ছেলে শেখ পারভেজ

মেয়ে ফিরদৌসী উচ্চ শিক্ষিতা। সে এম-এ পাশ করেছে। কিন্তু তাঁর মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডী পার হতে পারেনি বলে ফিরদৌসীর আক্ষেপের অন্ত ছিল না। তাই সে লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে নিজের মাকে ও দাদাকে লাগাতার অনুপ্রাণিত করে যায়। সেই অনুপ্রেরনায় উদ্ধুব্ধ হয়ে ফের লেখাপড়া শুরু করে ফিরদৌসির মা আয়েশা বেগম ও দাদা শেখ পারভেজ আলম। এবার মা ও ছেলে মিলে একসঙ্গেই দিচ্ছেন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সফল ভাবে পরীক্ষায় পাশ করার ব্যাপারেও তারা দৃঢ়প্রত্যয়ী। শিক্ষিত হবার জন্য মা ও ছেলের এই প্রচেষ্টাকে পরীক্ষকরাও কুর্নিশ জানিয়েছেন।

আয়েশা বেগমের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষিজীবী। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই দম্পতির পুত্র পারভেজ আলন ছয় বছর আগে লেখাপড়ায় ইতি টেনেছিল। কিন্তু পারভেজের বোন ফিরদৌসী খাতুন সেই পথে হাাঁটেনি। পারিবারিক আর্থিক প্রতিকুলতার মধ্যেও সে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-এ পাশ করেছে ফিরদৌসী । সে এখন ভালো চাকরির চেষ্টা চালাচ্ছে। নিজে উচ্চ শিক্ষিত হলেও আইসিডিএস কর্মী মা ও দাদার কম শিক্ষিত হয়ে থাকাটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল ফিরদৌসীকে। তাই সে তার মা ও দাদাকে ফের লেখাপড়ার আঙিনায় ফিরিয়ে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করে যায়। তাতে কাজও হয়।

ফিরদৌসীর মা ও দাদা দু’জনেই আবার লেখাপড়া শুরুর ব্যাপারে মনস্থির করে নিয়ে ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যান। এমনকি এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার জন্যেও তারা পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন। স্ত্রী ও ছেলে একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মেয়ের মতই খুশি হন বাবা সাইফুল আলম। এতে মা ও ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার আগ্রহ আরো বেড়ে গিয়েছে।

জেলার মেমারি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে বসে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন আয়েশা বেগম ও তাঁর ছেলে পারভেজ। আয়েশা জানান,তাঁর শৈশব জীবন খুব একটা সুখের ছিল না । ছোট বয়স থেকেই তিনি তাঁর বাবাকে কাছে পান নি। মামার বাড়িতেই কষ্টের মধ্যে বড় হন। প্রায় ২৫ বছর আগে সেখানকার স্কুলে সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার তিন মাস পর থেকে তাঁকে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। তার পর বিয়ে হয়ে গেলে সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছেলে ও মেয়েকে বড় করে তুলে তাদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ত্বও তাঁকে কাঁধে নিতে হয়। তারই মধ্যে ২০১০ সাল বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজে যোগ দেন।

আয়েশার কথায়, সংসার ও আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা তিনি তাঁর উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ের কাছ থেকেই পান। মেয়ের অনুপ্রেরনাতেই সংসার সামলে রাতে পড়াশুনা করতেন। আর এবার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সমালোচনাকে দূরে সয়িয়ে রেখে ছেলের সঙ্গে তিনিও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। এরপর একই ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে বলে আয়েশা বেগম জানিয়েছেন।

আয়েশার মত তাঁর ছেলে পারভেজ আলমও দাবি করেছেন, তিনি তাঁর বোন ও বাবার অনুপ্রেরণাতেই আবার লেখাপড়ায় ফিরে এসেছেন। পারভেজ বলেন, “আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। অনটনই ছিল আমাদের পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোনও কাজে যোগ দিয়ে আমাকে উপার্জন করতে হবে। নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। তাই ছয় বছর আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেই আমি লেখাপড়ায় ইতি টানি। তার পর মুম্বাইয়ে চলে গিয়ে অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলাম ।কিন্তু লেখাপড়া ছাড়তে হওয়ায় মনে আক্ষেপ রয়েই গিয়েছিল।
তারই মধ্যে বোন ফিরদৌসী লাগাতার পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে এম-এ পাশ করে ফেলে। তারপর থেকে বোনই আমাকে ও মাকে অনুপ্রাণিত করে চলে লেখাপড়া শুরুর জন্য। বোনের অনুপ্রেরণাতেই আমি ও আমার মা আবার লেখাপড়া শুরু করে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।’

আয়েশা এবং তাঁর ছেলে পারভেজ দু’জনেই জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হওয়া সবকটি বিষয়ের পরীক্ষা তাঁরা ভালোই দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘শিক্ষা লাভের কোন বয়স নেই ,শিক্ষার বিকল্পও কিছু নেই।’

মা ও ছেলের পরীক্ষা কেন্দ্র মেমারি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তোরাব আলী বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই আয়েশা বেগম ও তাঁর ছেলে পারভেজ আলম সামাজে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। মা ও ছেলে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। কোনও কারণে যাঁরা অনেক আগে স্কুল ছুট হয়েছেন বা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি তারাও এই মা ও ছেলেকে দেখে ফের লেখাপড়ার জগৎতে ফিরে আসতে পারেন। এমনটা হলে সমাজ উন্নত হবে।’

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Mother and son in madhyamik together under inspiration of daughter in burdwan saktigar