Advertisment

চমৎকার দৃষ্টান্ত, উচ্চ-শিক্ষিতা মেয়ের প্রেরণায় একসঙ্গে মাধ্যমিক পাস মা ও ছেলের

মেয়ের মান রাখলেন মা ও দাদা।

author-image
Rajit Das
New Update
mother and son pass madhyamik with the inspiration of ma pass daughter in burdwan , চমৎকার দৃষ্টান্ত, উচ্চ-শিক্ষিতা মেয়ের প্রেরণায় একসঙ্গে মাধ্যমিক পাস মা ও ছেলের

আয়েশা বেগম ও পারভেজ আলম।

মেয়ে ফিরদৌসী উচ্চ শিক্ষিতা। সে এম-এ পাশ করেছে। কিন্তু তাঁর মা ও দাদা মাধ্যমিকের গণ্ডীও টপকাতে পারেনি। আর তাতেই ফিরদৌসীর আক্ষেপের অন্ত ছিল না। তাই মেয়ে ফিরদৌসী লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে তাঁর মা আয়েশা বেগম ও দাদা শেখ পারভেজ আলমকে লাগাতার অনুপ্রেরণা দিত। আর তাতেই উদ্ধুব্ধ হয়ে আবারও লেখাপড়া শুরু করেন ফিরদৌসির মা ও দাদা। পড়াশুনা করে প্রস্তিতি নিয়ে এ বছর মা ও ছেলে মিলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হতেই দেখাযায় ওই দু’জনেই ফিরদৌসীর মান রেখেছেন। মা আয়েশা বেগম ৩৮৫ নম্বর আর দাদা পারভেজ আলন ৪৬২ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেছেন।

Advertisment

আয়েশা বেগমের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার ঘাটশিলা গ্রামে। তাঁর স্বামী শেখ সাইফুল আলম পেশায় কৃষিজীবী। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই দম্পতির পুত্র পারভেজ আলন ছয় বছর আগে লেখাপড়ায় ইতি টেনেছিল। কিন্তু পারভেজের বোন ফিরদৌসী খাতুন সেই পথে হাাঁটেনি। পারিবারিক আর্থিক প্রতিকুলতার মধ্যেও ফিরদৌসী লেখাপড়া চালিয়ে যান। ইতিমধ্যে তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করে ফেলেছে। এখন তিনি ভালো চাকরির খোঁজ চালাচ্ছেন।

নিজে উচ্চ শিক্ষিতা হলেও আইসিডিএস কর্মী মা ও দাদার কম শিক্ষিত হয়ে থাকাটা মেনে নিতে পারতো না ফিরদৌসী। তাই তিনি তাঁর মা ও দাদাকে পুণরায় লেখাপড়ার আঙিনায় ফিরিয়ে আনার জন্য অনুপ্রাণিত করে চলেন। তাতেই কাজও হয়। ফিরদৌসীর মা ও দাদা দু’জনেই পুণরায় লেখাপড়া শুরুর জন্য ঘাটশিলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যান । পড়াশুনা করে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এ বছর তাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই বাজিমাত করে ফেলেন। স্ত্রী ও ছেলে একসাথে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাস করে যাওয়ায় বেজায় খুশি ফিরদৌসীর বাবা সাইফুল আলম। তাঁর কথায় আমার ছেলে ও স্ত্রী দৃষ্টান্ত তৈরি করলো।

আয়েশা বেগম এদিন বলেন, 'আমার শৈশব জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। ছোট বয়স থেকেই বাবাকে কাছে পায়নি। মামার বাড়িতেই কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। প্রায় ২৫ বছর আগে সেখানকার স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে তিন মাস পর পড়াপ পরই লেখাপড়ায় ইতি টানি। তার পর বিয়ে হয়ে গেলে সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যাই। ছেলে ও মেয়েকে বড় করে তুলে তাদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ত্বও আমাকে নিতে হয়। তারই মধ্যে ২০১০ সাল বর্ধমানের একটি আইসিডিএস কেন্দ্রে কাজে যোগ দিয়েছিলাম।'

আয়েশার সংযোজন, 'সংসার ও আইসিডিএস কেন্দ্রের কাজ সামলেও যে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় এই অনুপ্রেরণা আমি আমার উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। মেয়ের অনুপ্রেরনাতেই সংসার সামলে রাতে পড়াশুনা করেছি। আর এবার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে রেখে ছেলের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলাম। পাসকরব জানতাম। এর পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে।'

আয়েশার মত তাঁর ছেলে পারভেজ আলমও দাবি করেছেন, তিনি তাঁর বোন ও বাবার অনুপ্রেরণাতেই

আবার লেখাপড়া জীবনে ফিরে এসেছেন। পারভেজ বলেন, 'আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না। এই অবস্থায় শুধুই মনে হত কোনও কাজে যোগ দিয়ে আমাকে উপার্জন করতে হবে। নয়তো আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে। তাই ছয় বছর আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেই আমি লেখাপড়ায় ইতি টানি।

তার পর মুম্বইয়ে চলে গিয়ে অলংকার তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলাম। কিন্তু লেখাপড়া ছাড়তে হওয়ায় মনে আক্ষেপ রয়েই গিয়েছিল। তারই মধ্যে বোন ফিরদৌসী লাগাতার পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে এমএ পাশ করে ফেলে। তারপর থেকে বোনই আমাকে ও মাকে অনুপ্রাণিত করে চলে পুণরায় লেখাপড়া শুরুর জন্য। বোনের অনুপ্রেরণাতেই আমি ও আমার মা পুণরার লেখাপড়া শুরু করে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসি। সবকটি বিষয়ের পরীক্ষাই ভালো দিয়েছিলাম। মাধ্যমিক পাস করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।' পারভেজের কথায় 'বোনের কথা থেকে এটুকু বুঝেছি যে শিক্ষা লাভের কোন বয়স নেই,শিক্ষার কোনও বিকল্পও নেই।'

আয়েশা বেগম ও তাঁর ছেলে পারভেজ মেমারি হাই মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে বসেই পরীক্ষা দিয়েছিল । মা ও ছেলে দু’জনেই পাস করেগেছে জেনে ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তোরাব আলী মহাশয়ও খুব খুশি। তিনি এদিন বলেন , 'প্রকৃত অর্থেই আয়েশা ও তাঁর ছেলে পারভেজ দৃষ্টান্ত তৈরি করলো। যাঁরা লেখাপড়া সম্পূর্ন করতে পারেননি তাঁরা যদি এই মা ও ছেলেকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তাহলে সমাজ উন্নত হবে।'

East Burdwan burdwan Madhyamik Exam 2023 madhyamik result
Advertisment