Advertisment

রামায়ণের শ্রবণ কুমার! মায়ের ইচ্ছাপূরণে ৫২,০৩২ কিলোমিটার পাড়ি

অন্ধ মুনির সন্তান শ্রবণ কুমার নামে রামায়ণে একটি চরিত্র আছে। যে তাঁর মা-বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে তাঁদের কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন। কৃষ্ণ কুমারের কর্মকাণ্ড অনেকটা সেই চরিত্রের মতো।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
north bengal

স্কুটারেই ভারত দর্শণ মা ও ছেলের। ছবি- সৌমিত্র সান্য়াল

রামায়ণের শ্রবণ কুমারকে দেখা গেল জলপাইগুড়িতে। ডি কৃষ্ণকুমার ঠিক যেন এ যুগের শ্রবন কুমার।

Advertisment

মায়ের ইচ্ছা পূর্ণ করতে মোটা টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে মাকে স্কুটারে চাপিয়ে দেশ জুড়ে থাকা তীর্থস্থান দর্শন করাচ্ছেন মহীশূরের বাসিন্দা দক্ষিণামূর্তি কৃষ্ণ কুমার। বছর কুড়ি আগে বাবার দেওয়া স্কুটার করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মা চূড়ারত্না দেবীকে নিয়ে মহীশূরের বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেন। বিভিন্ন রাজ্য পেরিয়ে মাকে নিয়ে জলপাইগুড়ি হয়ে রওনা দিয়েছেন ভূটানের উদ্দেশ্যে।

কর্নাটকের মহীশূরের এই বাসিন্দা গত ২৫ মাস ধরে স্কুটারের পেছনে মাকে বসিয়ে ৫২,০৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। ২০১৫ সালের অগাস্ট মাসে তাঁর বাবা দক্ষিণামূর্তি মারা যান। বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। কৃষ্ণ কুমার একটি বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থায় টিম লিডারের চাকরি করতেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৪১ বছর। মা চূড়ারত্না দেবীর বয়স ৭০ বছর।

আরও পড়ুন: বিধানসভায় ধুন্ধুমার, তৃণমূল বিধায়কের কুকথায় কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাম বিধায়ক

অন্ধ মুনির সন্তান শ্রবণ কুমার নামে রামায়ণে একটি চরিত্র আছে। যে তাঁর মা-বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে তাঁদের কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন। কৃষ্ণ কুমারের কর্মকাণ্ড অনেকটা সেই চরিত্রের মতো। যিনি তাঁর মায়ের ইচ্ছা পূর্ণ করতে মোটা টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে স্কুটারে চেপে ভারত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

মা চূড়ারত্না দেবী জানান, তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় রান্না করে কেটে গিয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির কাজ করে করতেন তিনি। সংসারের বাইরে  বাইরে বেরনোর সময় একদমই ছিল না। তাই দর্শনীয় স্থানগুলো তো দূরের কথা বাড়ির আশেপাশে মন্দিরগুলিও দেখে হয়নি বছর ৭০ এর এই বৃদ্ধার। এরপর ছেলে তাঁকে নিয়ে সারা ভারত দর্শন করাচ্ছে। এতে তিনি খুব খুশি। তিনি বর্তমান প্রজন্মকে বার্তা দিতে চান বিয়ের পর আজকাল অধিকাংশরাই আলাদা হয়ে যায়। এটা ঠিক নয়। বয়ষ্করা চায় শেষ জীবনটা নিজের সন্তানদের কাছেই থাকতে।

আরও পড়ুন: গ্রামে ভূতের তাণ্ডব? ওঝার ‘ঝাড়ফুঁকে’ ২ শিশুর মৃত্যুতে শোরগোল মালদায়

ছেলে কৃষ্ণ বলেন, "বাবা মারা যাবার পর মাকে জিজ্ঞাসা করি, মা দেশের কোন তীর্থ স্থানগুলিতে তুমি যেতে চাও। মা বলেন, বাবা তুই আমাকে আশেপাশের মন্দিরগুলো দেখা তবেই যথেষ্ট। নাম করা তীর্থ স্থানগুলো এই বয়সে আর নয় নাই দেখলাম।" মায়ের কথা শুনে ছেলে কৃষ্ণকুমারের বিবেক দংশন হয়। তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় মা কে স্কুটারে চাপিয়ে দেশ জুড়ে থাকা তীর্থ স্থান গুলিতে নিয়ে যাবে।

কেন তিনি স্কুটারকেই বাছলেন?

তিনি জানান, যে তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আর এটা তাঁর বাবার দেওয়া উপহার। এটা সঙ্গে থাকলে তাঁদের মনে হয় পুরো পরিবার একসঙ্গে আছে।

বিভিন্ন সমস্যাকে সামনে রেখে অনেকেই সাইকেল, বাইক বা পায়ে হেটে দেশ-বিদেশে পাড়ি দেন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছাপূরণের এই ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal north bengal
Advertisment