কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে দুই বাঙালি পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর সরকারি ভাবে ঘোষিত হবার আগেই ঘটনার আকস্মিকতার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের দুঃসংবাদ এসেছিল। পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম মাকালু শৃঙ্গ অভিযানে নিখোঁজ বাংলার এভারেস্টজয়ী দীপঙ্কর ঘোষ। শনিবার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট করে জানিয়েছেন তীব্র ঝোড়ো হাওয়া থাকার কারণে হেলিকপ্টারে দীপঙ্করের উদ্ধারকার্য ব্যহত হয়েছে। আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হলে ফের উদ্ধারকাজ চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেভেন সামিটের তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছিল মাকালু শৃঙ্গ (৮৪৮৫ মিটার) ছুঁয়ে নীচে নামার পথে ৮০০০ মিটার উচ্চতায় ৪ নম্বর ক্যাম্পের কাছাকাছি নিখোঁজ হন দীপঙ্কর (৫২)। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ অভিযাত্রীর দলের এক জনের সঙ্গে দীপঙ্কর এবং তাঁর গাইড বৃহস্পতিবার সন্ধের দিকে ৪ নম্বর ক্যাম্পের কাছাকাছি আটকে যান। এজেন্সির তরফে দীপঙ্করের বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে বহু পর্বতারোহী আটকে পড়ায় আগামী ২২ মে'র আগে পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে এজেন্সি।
আরও পড়ুন, বিপ্লব-কুন্তলের দেহ উদ্ধার করল শেরপার দল
বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে দীপঙ্কর ঘোষের সঙ্গে এজেন্সির সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে নামার সময় তাঁর গতি খুব ধীর হয়ে এসেছিল বলে জানা যাচ্ছে। দীপঙ্করের শেরপাও আহত অবস্থায় ছিলেন। নিখোঁজ পর্বতারোহীর শরীরে তুষারক্ষতের আশঙ্কা করছে এজেন্সি।
অন্যদিকে কাঠমান্ডু পোস্ট তাঁদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেষবার যেখানে দেখা গিয়েছিল দীপঙ্করকে, উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছে তাঁর খোঁজ পায়নি।
বাংলার অন্যতম অভিজ্ঞ পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "দীপঙ্কর এই সময়ের সবচেয়ে দক্ষ পর্বতারোহীদের একজন। নেমে আসার সময় ওঁর অসাবধান হওয়ার কথা না। তবে ওই উচ্চতায় ঠিক কী পরিস্থিতি, তা এখানে বসে বলাও সম্ভব না। তবে মিরাক্যল হয় না, এমনটা নয়। আমিও ধৌলাগিরি অভিযানে ১৬ ঘন্টা অক্সিজেন ছাড়া বেঁচেছিলাম ২৫ হাজার ফুটের ওপরে"।
মাকালু অভিযানে বেরনোর আগে দীপঙ্কর ঘোষের পোস্ট
গত ৮ এপ্রিল মাকালু অভিযানের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন দীপঙ্কর ঘোষ। গত সেপ্টেম্বরেই তিনি জয় করেন চো ইউ শৃঙ্গ । হাওড়ার বেলানগর নিবাসী দীপঙ্কর ঘোষের এটিই ছিল সপ্তম আট হাজারি শৃঙ্গ জয়। এর আগে এভারেস্ট, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মানাসলু এবং ধৌলাগিরি শৃঙ্গ ছুঁয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশের মধ্যে নানা সফল অভিযান করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ধৌলাগিরি অভিযানে তুষারক্ষত (ফ্রস্ট বাইট)য় গুরুত্বর জখম হয় দীপঙ্করবাবুর হাতের আঙুল। দু’হাতের ৭টি এবং বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল আংশিক কেটে বাদ দিতে হয়। সেই অবস্থাতেই এক বছর কাটতে না কাটতেই ২০১৮-এর আগস্ট মাসে ফের বেরিয়ে পড়েছিলেন নতুন অভিযানে। দীপঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজীববাবু জানিয়েছেন সপ্তাহ দুয়েক আগে পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর।
প্রসঙ্গত, হিমালয়ের কোনও শৃঙ্গ অভিযানের ক্ষেত্রে পর্বতারোহীর দেহ উদ্ধার না হলে নিখোঁজ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে নেপাল সরকার।