তিনি দলবদলু সাংসদ। বিজেপির প্রতীকে ব্যারাকপুরের সাংসদ হলেও পরে ফিরেছেন তৃণমূলে। কিন্তু পুরনো দলে সাংসদ অর্জুন সিংয়ের যেন আর আগের প্রতাপ নেই। এরমাঝেই জোড়াফুলের একাধিক মন্ত্রী, নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে শ্রীঘরে। শিক্ষা ও কয়লা কেলেঙ্কারিতে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাও কেন্দ্রীয় এজেন্সির নজরে। এসেবর জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার দায়ী করেছেন মোদী সরকারের 'প্রতিহিংসা'র রাজনীতিকে। গোটা তৃণমূল একই দাবি করছে। কিন্তু কিছুটা যেন ভিন্ন মত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা সাংসদ অর্জুন সিংয়ের। আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগে হঠাৎ কেন অর্জুনের বোধোদয়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অর্জুন উবাচ-
'নিজেদেরও ঠিক থাকতে হবে'
শুক্রবার শ্যামনগরে তৃণমূলের এক বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন ছিল। সেখানে হাজির ছিলেন সাংসদ অর্জুন। ওই অনুষ্ঠানেই সাংসদকে বলতে শোনা যায়, 'এজেন্সির সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেদেরও ঠিক থাকতে হবে। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। বাংলার রাজনীতিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আর কেউ চেনেন না। উনি যদি কিছু স্টেপ নেন, তবে সেটা সব কর্মীকে সেটা সমর্থন করতে হবে। ঠিক-ভুল মানুষ বিচার করবেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদক্ষেপ করবেন, সেই অনুযায়ী আমাদের সবাইকে চলতে হবে। দলের কিছু সদস্যের জন্য যদি সবাই অসুবিধার মধ্যে পড়েন, আমি মনে করি, সেই লোককে দলে না রাখাটাই ভাল। যে লোকটা দু’দিন আগে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে, সেই মানুষ যদি বুথে বসে থাকে, মানুষ অন্য কাউকে ভোট দেবেন। তাই আমাদের নজর রাখতে হবে। কোনও নাককাটা, গালকাটা বা কানকাটাকে বুথে বসতে দেওয়া যাবে না। সভ্য, ভদ্র মা-দিদি কাউন্সিলর যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বুথে ফিরিয়ে আনুন। বুথের মানুষের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ থাকলে কেউ প্রার্থীকে হারাতে পাবে না।'
তৃণমূলের একের পর এক নেতার বাড়িতে ইডি, সিবিআই এবং আয়কর হানা দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অর্জুন সিংয়ের মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।
'বিজেপির থেকেও অনেককিছু শিখেছি'
'রাজনীতিতে সব সময় শিখতে হয়। আমি ভোট করতে শিখেছি। কংগ্রেস থেকে শিখে এসেছি। এমনকি, ভোটের রাজনীতি করতে গেলে বিজেপির কাছেও অনেক শিখতে হয়েছে। আমি শিখেছি। জ্ঞান নিতে গিলে মাস্টারমশাইয়ের জামার কলার ধরলে হবে না। মাস্টারমশাইকে প্রণাম করতে হবে। হাতজোড় করে জ্ঞান নিতে হবে।'
'শত্রু কখনও কমজোরি হয় না'
লোকসভা ভোটের আর বেশি বাকি নেই, সেই সূত্রেই তৃণমূল নেতা, কর্মীদের সতর্ক করে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ বলেছেন, 'আগামিদিনে নির্বাচন আছে। শত্রুকে কোনও দিন কমজোরি ভাববেন না। শত্রু কখনও কমজোরি হয় না। আর আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। যদি বুথে কর্মী সঠিক না থাকেন, ভোটার লিস্ট যদি আপনাদের মুখস্থ না থাকে, কে বিরোধী রাজনীতি করেন, তা যদি বুঝতে না পারেন, তা হলেই সমস্যা। মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ঠিক রাখতে হবে। এখন তো আমরা পানের দোকান, চায়ের দোকানে বসতে ভুলে গিয়েছি! পাড়ায় আড্ডা মারি না। ভেবে নিয়েছি, সবাই আমাদের ভোট দিয়ে দেবেন। আমাদের এই অঞ্চলে ৯০ শতাংশ পার্টি অফিস খোলেই না। কিন্তু অফিসে বসুন। সময় দিন। আমি কিন্তু এলাকায় থাকলে অফিসে বসি। মানুষের সমস্যা শুনুন। তবেই জয় হবে।'
পাল্টা বিজেপি
অর্জুন সিংয়ের আত্মশুদ্ধির পাঠ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, 'উনি বিজেপিতে থাকার সময় মুকুল রায়ের পর দ্বিতীয় গদ্দার হয়েছিলেন। একশোর বেশি মামলা হয়েছিল অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে। তখন ইডি, সিবিআইয়ের দ্রুত তদন্তের পক্ষে ছিলেন। এখন ওই গদ্দারই গদাধর। কানকাটা, নাককাটাদের চিহ্নিত করছেন। আসলে ওনার অবস্থান পেন্ডুলামের মত।'