শতাব্দী রায়ের পর এবার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়লেন বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ অসিত মাল। শনিবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকায় 'দিদির দূত' কর্মসূচিতে যান সাংসদ। এলাকা ঘুরে দেখার সঙ্গেই তিনি পৌঁছেছিলেন ষাটপলসা গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় বাসুদেবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সাংসদকে দেখেই অভিযোগের পাহাড় উগরোতে থাকেন স্থানীয়রা। ময়ূরেশ্বরের বিধায়ককে কেন এলাকা দেখা যায় না? আবাস দুর্নীতি, ঢিলেঢালা স্বাস্থ্য পরিষেবা, উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা না মেলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন রাজ্যের শাসক দলের সাংসদ। তবে অসিতবাবু গ্রামবাসীদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন।
বাম ছেড়ে কুড়ি বছর আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাসুদেবপুরের বাসিন্দা নবকুমার দাস সাংসদকে দেখেই এগিয়ে যান। তাঁর সঙ্গেই জড়ো হন আরও বেশ কয়েকজন। অসিত মালের কাছে নবকুমার ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। বলেন, '‘বিধায়ককে এলাকায় দেখাই যায় না। কখনও-সখনও এলাকায় তাঁর গাড়ি দেখি। তবে তিনি জানলার কাচ তুলে চলে যান। ২০ বছর পার্টি করছি কোনও সম্মান দেয় না। এলাকার কোনও উন্নয়ন কাজ করেন না।' স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে বৃদ্ধের অভিযোগ, 'হাসপাতালে কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। ছোটখাটো অসুখ হলেও সিউড়ি এবং রামপুরহাট হাসপাতালে যেতে বলা হয়।'
উত্তেজিত নবকুমারকে অসিত মালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা পার্টি দফতরে গিয়ে অভিযোগ জানানোর কথা বলতে থাকেন। তাতে অবশ্য ক্ষোভের পারদ আরও চড়়ে।
সব শুনে বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল বলেন, 'সব তো শুনলাম আমি। কেন এমন অভিযোগ উঠছে সেটা নিয়ে বিধায়ক অভিজিত রায়ের সঙ্গে কথা বলব। আর আবাস যোজনায় বাড়ির দরখাস্তের জন্য দলের নেতাদের ওনাকে সহায্য করতে বলেছি।' দিদির-দূত কর্মসূচিতে কেন সাংসদের সঙ্গে নেই বিধায়ক? অসিতবাবুর কথায়,'বিধায়কের আসার কথা ছিল। কেন আসেননি জানি না। আমাকে কিছু জানায়নি। ওঁর বাবা অসুস্থ। কোনও বাড়াবাড়ি হল, নাকি অঘটন ঘটে গেল খোঁজ নিয়ে দেখব।'
তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভের রোষ প্রসঙ্গে বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, 'দলের যে নেতৃত্বই কর্মসূচিতে ডাকুন না কেন আমি সবসময়ই থাকি। নিয়মিত সব ব্লকে যাই।' আবাস থেকে কেন প্রকৃত দুস্থদের নাম বাদ পড়ছে? বিধায়কের জবাব, '১৭ দফা নিয়ম মেনেই সবাই বাড়ি পাবেন। এতে কেউ কেউ বাদ পড়ছেন। তাই ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। তবে নতুন যে তালিকায় (আবাস যোজনার) যাতে সবাই সুবিধা পান সেটা দেখব।'
শুক্রবার দিদির-দূত হয়ে বীরভূমের রামপুরহাটের মেলেরডাঙা ও বিষ্ণুপুরে বিক্ষোভের মুখে পড়েন শতাব্দী। তাঁকে বসন্তের কোকিল বলে কটাক্ষ করেন অনেকে। কোনওক্রমে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে এলাকা ছাড়েন শতাব্দী। একই দিনে দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত বালিজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুখুটিয়া গ্রামে আবাস যোজনার তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। ঘর না পাওয়ায় কেন্দ্রের ওপর দায় ঠেলে কোনওক্রমে গ্রাম ছাড়েন দেবাংশু।