দেবী কালী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তিনি এখন সমালোচনার মুখে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানোয় পালটা সরব হলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে কালী উপাসক দাবি করে মহুয়া জানিয়েছেন, শুধু এই সব কেন। তিনি কোনও কিছুতেই ভয় পান না।
দেবী কালীকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সমালোচনা ঝড় উঠেছে। নেটিজেনরা তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, 'মহুয়া মৈত্র দেবী কালী সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মন্তব্যের সঙ্গে দল সহমত পোষণ করছে না। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে।'
আরও পড়ুন- দলের অবস্থানে ‘বিরক্ত’ মহুয়া, তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডেল আনফলো সাংসদের
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'রাজ্য পুলিশকে এফআইআর দায়ের করতে হবে। তাঁকে গ্রেফতার করতে ১০ দিন সময় দেব। তা না-হলে ১১ তারিখ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তৃণমূলকে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধেও সেরকম ব্যবস্থা নিতে হবে।' বিজেপির মহিলা মোর্চার সদস্যরাও মিছিল করে গিয়ে বউবাজার থানায় মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এই হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতেই পালটা মুখ খুলেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, 'জয় মা কালী! বাঙালিদের পূজিতা দেবী নির্ভীক এবং অপ্রসন্না।' এতেও না-থেমে মিনিট দশেকের ব্যবধানে ফের টুইট করেন তিনি। তাতে লিখেছেন, 'এই ব্যবস্থা বিজেপির ওপর নিন! আমি একজন কালী উপাসক। আমি কিছুতেই ভয় পাই না। আপনার অজ্ঞতাকে নয়। আপনার গুন্ডাদের নয়। আপনার পুলিশকেও নয়। আর, নিশ্চিতভাবে আপনার ট্রোলকেও নয়। সত্যের পিছনে কোনও শক্তির দরকার পড়ে না।'
এর আগে মঙ্গলবারইই বিজেপি নেতাদের আক্রমণের জবাব দিয়েছিলেন মহুয়া। তিনি টুইট করেছিলেন, ‘আমি সংঘীদের বলতে চাই, অসত্য বলে আপনারা ভাল হিন্দু হতে পারবেন না। আমি কখনও কোনও চলচ্চিত্রের কোনও পোস্টারের সমর্থন করে ধূমপান শব্দের উল্লেখ করিনি। তারাপীঠে গিয়ে দেখে আসুন সেখানে দেবীকে প্রসাদ হিসেবে কী ধরনের খাবার বা পানীয় দেওয়া হয়।’
মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে এই গোলমালের সূত্রপাত এক সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যকে ঘিরে। সেখানে তৃণমূল সাংসদ বলেছিলেন, 'নিজের ভগবানকে তুমি কীভাবে দেখতে চাও, তা কল্পনা করার অধিকার সকলের আছে। ভুটান আর সিকিমে গেলে দেখা যাবে সেখানে পুজোয় ভগবানকে হুইস্কি দেওয়া হয়। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশের কোথাও এমন ভোগ দিলে অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। আমার কাছে কালী একজন মাংস খান এমন দেবী। শুধু তাই নয়, সুরা পান করছেন এমন দেবীও বটে। তবে, এই বিষয়ে মানুষের আলাদা মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু, সে নিয়ে আমি চিন্তিত নই।'
সম্প্রতি মা কালীর একটি পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেবীকে সিগারেট খেতে দেখা যাচ্ছে। পোস্টারে দেবীর হাতে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের একটি রঙিন পতাকাও দেখা যাচ্ছে। সেই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন লীনা মণিমেকলাই। সেই পোস্টার নিয়ে বিতর্কের ঝড়ে উঠেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যেই দেবী কালীকে নিয়েই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সাংসদ।