Advertisment

ED-CBI থেকে বাঁচতেই আমেরিকায় গা-ঢাকা অভিষেকের! বোমা ফাটালেন সৌমিত্র খাঁ

তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, চোখের চিকিৎসা করাতেই আমেরিকায় গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Abhishek_Soumitra

ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

চোখের চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের এই দাবি মানতে নারাজ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তাঁর অভিযোগ, ইডি-সিবিআইয়ের জেরা থেকে বাঁচতে আমেরিকায় পালিয়ে অভিষেক। বিজেপি নেতার এই বিতর্কিত মন্তব্যে স্বভাবতই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

Advertisment

সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য রাজনীতির মঞ্চে দেখা যাচ্ছে না। শাসকদল তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যখন একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে তখন তিনি কোথায়? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। কারণ, শুধু ডায়মন্ড হারবারের সাংসদই নন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে দেন যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর চোখের চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর চোখে আঘাত পান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল। তারপর থেকে চোখের সমস্যায় তাঁকে হামেশাই ভুগতে হয় বলে প্রকাশ্যে বহুবার দুঃখপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি, চোখের চিকিৎসার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুবাইতেও যেতে হয়েছিল বলে জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

অবশ্য, সেটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুবাই সফরের মূল কারণ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী দল বিজেপি। শুধু তাই নয়, এবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমেরিকায় যাওয়া নিয়ে তারা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। জবাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেকের চোখের পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতৃত্বও সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিষেকের চোখের করুণ দশার ছবি পোস্ট করেন।

কিন্তু, তারপরও যে এই বিতর্ক মেটেনি, রবিবার তা-ই স্পষ্ট করে দিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বাঁকুড়া থেকে কলকাতা যাবার পথে রবিবার দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য তিনি বর্ধমান সদর বিজেপি কার্যালয়ে এসেছিলেন। সেখানে সৌমিত্র খাঁ অভিযোগ করেন, 'ইডি-সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচতে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত অভিষেক বাইরেই থাকবেন।'

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ আরও বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি এক চোখের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। উনি (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে কুনাল ঘোষ জানিয়েছেন সেই হাসপাতালে আমার এক বন্ধুকে দিয়ে খোঁজ নিয়েছি। জেনেছি, তিনি (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সেখানে শুধুমাত্র চোখ দেখিয়েছেন, ভর্তি হননি। আসলে ইডি-সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচতেই অভিষেক আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছেন। ইডি-সিবিআই এখন অভিষেকের স্ত্রী-শ্যালিকাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এরপর হয়তো অভিষেককে ডাকা হত।'

আরও পড়ুন- ‘প্রয়াত বিধায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আন্ধেরির প্রার্থী প্রত্যাহার করুন’, ফড়ণবিশকে চিঠি রাজের

সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতেও মুখ খোলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ। তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গজুড়ে মানিক ভট্টাচার্যের করা চাকরি প্রার্থীদের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই প্রার্থীতালিকার বেশিটা তৈরি হয়েছে।' রবিবারই শিবপুরে ফের নতুন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে তির্যক মন্তব্য করেন সৌমিত্র। তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে কয়লা ও বালিপাচার নগদ লেনদেনের মাধ্যমেই হয়। তাই এখানে টাকা উদ্ধার হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।'

মেট্রো রেলের কাজের জন্য কলকাতার বউবাজারে ফের একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরা পড়েছে। এর দায়ও তৃণমূল সুপ্রিমোর ঘাড়েই ঠেলেন সৌমিত্র। তিনি বলেন, 'একটা পুরোনো শহরে এই ধরনের প্রজেক্ট করতে গেলে কিছু ক্ষতি হয়ই। তার ওপর মেট্রো রেলের প্রকল্পের নকশা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতই পরিবর্তন করা হয়েছিল। এর আগে যেমন বড় বাজারে ওভারব্রিজ ভেঙে বহু মানুষ প্রাণ হারালেন।'

রাজ্যের শাসক দল অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র খাঁ বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলেছিলেন যে একশো দিন ও আবাস যোজনার টাকা আমাদের দরকার নেই।'

শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের একটি বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দলের কর্মীদেরকে বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদেরকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে রাখার কথা। এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র খাঁ বলেন, 'আমরা এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করব। তার পরেই তৃণমূলশাসিত জেলা পরিষদে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্ত হবে।'

সৌমিত্র খাঁয়ের এই সব মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সৌমিত্র খাঁয়ের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তৃণমূল মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে ভয় পায় বিজেপির কেন্দ্র এবং রাজ্য নেতৃত্ব। তাই, বিদেশে চোখের চিকিৎসা করাতে যাওয়া তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে। বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ বিজেপিকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। ইডি আর সিবিআইকে বিজেপি যতই কাজে লাগাক, ২০২৪ সালেও দেশের মানুষ বিজেপিকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।'

abhishek banerjee Soumitra Khan ED
Advertisment