Advertisment

পাহাড়চূড়ায় পদে পদে বিপদ, জল-খাবার ছাড়াই বেঁচে ফেরেন রত্নিটিব্বা শৃঙ্গজয়ী চিন্ময় মণ্ডল

কতটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, সেকথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানালেন চিন্ময়।

author-image
Subhamay Mandal
New Update
Himachal Pradesh, Kullu, Mt Ali Ratni Tibba, Climbers, বাঙালি পর্বতারোহী, আলি রত্নিটিব্বা, কুল্লু

র আগে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন চিন্ময়।

অদম্য জেদ আর দুঃসাহসে ভর করে চার বন্ধু বেরিয়ে পড়েছিলেন হিমাচল প্রদেশের দুর্গম পাহাড় জয়ে। কিন্তু পাহাড়চূড়ায় আতঙ্কের মতো পরিবেশ তৈরি হবে। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শেষে উদ্ধারকারী দল খুঁজতে আসবে এমনটা স্বপ্নও ভাবেননি তাঁরা। শেষমেশ প্রাণ বাঁচিয়ে শৃঙ্গজয় করে ঘরে ফিরেছেন চারজন। তাঁদেরই একজন হৃদয়পুরের চিন্ময় মণ্ডল। অসীম সাহসিকতায় মৃত্যুকে জয় করে ঘরে ফিরেছেন। তবে শৃঙ্গজয় করেই।

Advertisment

হিমাচলের মাউন্ট আলি রত্নিটিব্বা ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম দুর্গম পাহাড়। শৃঙ্গের উচ্চতা ৫,৪৫৮ মিটার। অত্যন্ত দুর্গম এই পাহাড়ের পথ পাথুরে। খাড়াই পথ অনেকটা। বরফের লেশমাত্র নেই। তাই চড়াই বেশ ঝুঁকির। চারপাশে হিমবাহ থাকা এই পাহাড়ে জয় করতে বেরিয়ে পড়েন চার বন্ধু। এর আগে ভিনদেশি অভিযাত্রীরাই এই শৃঙ্গ জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন চিন্ময়। এবার দক্ষ অভিযাত্রীদের নিয়ে ফের পাহাড়জয়ে বেরোন।

Himachal Pradesh, Kullu, Mt Ali Ratni Tibba, Climbers, বাঙালি পর্বতারোহী, আলি রত্নিটিব্বা, কুল্লু
হিমাচলের দুর্গম আলি রত্নিটিব্বা শৃঙ্গজয়ী দল

শৃঙ্গজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন চিন্ময়রা। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, কতটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, সেকথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানালেন চিন্ময়। বলেন, "৬ সেপ্টেম্বর রুট রেইকি করতে আমরা বেরোই। ওইদিনই আমাদের কুক এবং শেরপা ক্যাম্পে চলে আসেন। ৭ সেপ্টেম্বর আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে সিদ্ধান্ত নিই সামিট করার জন্য মুভ করব। ৭-৮-৯ এই তিন দিন আমরা সামিটের রেখেছিলাম। জার্মানির একটা টিম চার ঘণ্টায় ক্লাইম্ব করে ফেলে। আমরা ভাবলাম তাহলে হয়তো আমাদের ৬ ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু জার্মান টিম যে রুট দিয়ে যায় সেই রুট আমরা খুঁজতে পারিনি।"

এর পর তিনি বলেছেন, "রুট খুঁজে না পাওয়ার কারণে ১৩ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। বিকেল পাঁচটা বেজে যাওয়ার পর সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিই আজ আর চড়াই নয়। আর ৩০০ মিটার বাকি, আজ রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিয়ে আগামিকাল (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে আবার চড়াই শুরু হবে। আমরা ভেবেছিলাম একদিন ক্লাইম্ব করে চলে আসব তাই ট্রেকার জ্যাকেট, স্লিপিং ব্যাগ নিইনি। শুধু ক্লাইম্বিং শু এবং গ্লাভস পরেছিলাম। রাত ৮টার সময়ে শেল্টারে গিয়ে পৌঁছাই। একটা পাথরের খাঁজে রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত আমরা কাটাই। এত ঠান্ডা মাইনাস ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খুব কষ্ট হয়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, মারামারি করে শরীরকে সচল রাখি। নাহলে হাত-পা কাজ করত না।"

Himachal Pradesh, Kullu, Mt Ali Ratni Tibba, Climbers, বাঙালি পর্বতারোহী, আলি রত্নিটিব্বা, কুল্লু
শৃঙ্গজয়ের আনন্দ চিন্ময়দের

"৮ তারিখ পৌনে সাতটার সময় সূর্যের আলো ফুটতেই আমরা চড়াই শুরু করি। ৯টা নাগাদ চূড়ায় পৌঁছাই, সেখানে ১ ঘণ্টা মতো থাকি। কিন্তু ফেরার সময় আমাদের কাছে মাত্র আধ লিটার জল, কোনও খাবার নেই। ফেরার সময় বরফ খেয়ে, লজেন্স খেয়ে আমরা কোনওরকমে কাটাই। খাবার-জলের অভাবে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে ১২ ঘণ্টা লেগে যায় নামতে। এসে ক্যাম্পে দেখি, আমাদের রাঁধুনী নেই। আমাদের দেরি হচ্ছে দেখে হয়তো ভয় পেয়ে নীচে সাহায্যের জন্য চলে যান। শেরপাও নীচে চলে যান। আর ভয়ে কেউ উপরে উঠে আসেনি। তার পর প্রশাসনের কাছে তাঁরা খবর দেন।"

"এই ভাবে ৯ সেপ্টেম্বর কেটে যায়। তখনও কেউ ফেরেনি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, সমস্ত মালপত্র নিয়ে আমরা নিজেরাই নীচে যাব। ৬০০ মিটার বরফের পাঁচিল টপকে আমরা রাত আটটায় ক্যাম্প ওয়ানে পৌঁছাই। সেখানেও দেখি খাবার রান্না করা রয়েছে, কিন্তু রাঁধুনি নেই। ১১ সেপ্টেম্বর আমরা চূড়ার মাথায় দেখতে পাই, হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চক্কর কাটছে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। জানতে পারি, আমাদেরই টিমের একজন বায়ুসেনার উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে আমাদের খোঁজে আসে। তখন বুঝতে পারি আমাদের উদ্ধারের জন্যই এসেছে। এর পর আরও একটি উদ্ধারকারী দল এসে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।"

এমন ভাবে বেঁচে ফিরে আসা, পাহাড়ের উপরে ভয় করেনি? এর উত্তরে চিন্ময়বাবু বলেন, "এতদিন ধরে পর্বতারোহণ করছি। সেই অর্থে কখনও ভয় করেনি। কিন্তু একটা সময় হিমবাহ ধরে যাওয়ার সময় গোটা এলাকা মেঘে ঢেকে যায়। আমরাও মেঘে ঢাকা পড়ে যাই। তখন একটু ভয় লেগেছিল। কিন্তু আর কখনও ভয় হয়নি।" আবার নতুন অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। শীঘ্রই আবার হয়তো বেরিয়ে পড়বেন নতুন শৃঙ্গজয়ে।

Mt Ali Ratni Tibba Chinmoy Mondal Himachal Pradesh
Advertisment