নারদ তদন্তে 'সহযোগিতা' করতে দুপুর সওয়া দুটো নাগাদ নিজাম প্যালেসে পৌঁছনোর পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা জিজ্জাসাবাদ করা হয় বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। সিবিআই সূত্রের খবর, প্রথমে আলাদা ভাবে আর পরবর্তীতে এসএমএইচ মির্জার মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় একদা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই সিবিআই তলব করেছিল একদা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে মুকুলবাবু জানিয়েছিলেন, দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকার কারণেই শুক্রবার নিজাম প্যালেসে উপস্থিত থাকতে পারবেন না তিনি। এরপর শুক্রবার বিকেলেই সিবিআই-কে চিঠি পাঠিয়ে মুকুল রায় জানিয়ে দেন, মহালয়ার তর্পণ শেষ হলেই তিনি হাজিরা দেবেন। সেই কথামতোই এদিন নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান মুকুল রায়।
জেরা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুকুল রায় বলেন, "বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করা যাবে না। আর আমি বলি তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করা একজন নাগরিকের কাজ। যতবার দরকার তদন্তকারী সংস্থা আমাকে ডাকবে, আমি ততবারই সহযোগিতা করব। আজকে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, প্রয়োজনে আবার ডাকলে আবার আসবো। আমি সহযোগিতা করবই কেন এই ঘটনায় আমি যুক্ত নই। তবে একটা বড় ষড়যন্ত্র আমার বিরুদ্ধে করছেন মমতা ব্যানার্জি। যারাই ভ্রষ্টাচার আরোপে গ্রেফতার হচ্ছে, তাঁদেরই বলা হচ্ছে মুকুল রায়ের নাম বলতে।
আরও পড়ুন- ‘বাবা মৃত্যুর আগে শেষ কথাটা বলেছিলেন প্রকাশ কারাটের সঙ্গে’
উল্লেখ্য, নারদ তদন্তে বৃহস্পতিবারই সিবিআই গ্রেফতার করে আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জাকে। তারপরই বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, “অপরাধীর ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা যেটা মনে করবে সেটাই হবে। এটা সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যাপার।” তৃণমূলের একদা ‘প্রধান সেনাপতি’ মুকুল রায় আরও জানান, “যে সময় এই লেনদেন চলছিল, সেই সময় আমি নির্বাচনে দাঁড়াইনি। কোথাও দেখা যায়নি যে আমি টাকা নিচ্ছি বা দিচ্ছি”। তবে তিনি যে তদন্তে সহায়তা করবেন তা প্রথম থেকেই স্পষ্ট করে দেন মুকুল।
আরও পড়ুন- কেন ম্যাথুকে পাঠিয়েছিলেন? মির্জার গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন মুকুল
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ম্যাথু স্যামুয়েলের করা নারদ স্টিং অপারেশনে হইচই পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। পরবর্তীকালে তদন্তের সময় ম্যাথু স্যামুয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গেই মূলত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল মুকুলকে, এমনটাই জানা গিয়েছে সূত্র মারফৎ। যদিও এদিন সে প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, “আমার সঙ্গে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে কোনও কথা হয়নি। ব্যবসার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে এসেছিল।” কিন্তু, তাহলে কেন বর্ধমানের প্রাক্তন পুলিশ সুপারের নাম বলেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মুকুলের ঝটিতি জবাব, “ওরা বর্ধমানে ব্যবসা করতে চেয়েছিল। জমি কেনা বেচা সংক্রান্ত ব্যাপার, তাই এসএমএইচ মির্জার নাম বলেছিলাম।”
আরও পড়ুন- পাঁচ দিনের সিবিআই হেফাজতে আইপিএস অফিসার মির্জা
তবে সিবিআইয়ের এই গ্রেফতারি নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুকুল রায়। তাঁর কথায়, “সিবিআই কী করবে সেটা তাঁদের ব্যাপার। আমার মত সত্য উদঘাটিত হোক। অনেককেই দেখা গিয়েছে টাকা নিতে। শোভন চট্টোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং আরও অনেকে আছেন। যা প্রমাণ করার আদালতই করবে। আমি বলার কেউ নই। বহু লোক টাকা নেয়। তবে রসিদ আছে কি না তা দেখতে হবে।”