স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ যেন বাংলার এক চেনা চিত্র। সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যপরিকাঠামোর বেআব্রু চিত্র বারে বারেই উঠে আসে সংবাদ শিরোনামে। কখনও গ্যাঁটের কড়ি খসালেই ওপিডি-তে ‘জামাই আদর’তো কখনও আবার এমআরআইয়ের জন্য দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ালেও তারিখ মেলেনা রোগীদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বারে বারে হাসপাতালগুলিকে মানবিক হওয়ার কথা বললেও বাস্তব চিত্র যে একেবারেই আলাদা তার প্রমাণ মিলেছে বহু ক্ষেত্রে।
শ্যামাদাস বৈদ্য আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চরম অব্যবস্থার ছবি প্রকাশ্যে। দিনের পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হাসপাতাল চত্ত্বর বারে বারেই পরিকাঠামো নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পরিষেবার বেশিরভাগই হাসপাতালে মেলেনা বলেই অভিযোগ রোগী ও তাদের পরিবারের। পাশাপাশি হাসাপাতালের একশ্রেণীর কর্মীদের দাদাগিরি মনোভাব বেশ স্পষ্ট।
হাসপাতালে বিগত ৪-৫ বছর ধরে এক্সরে, ইউএসজি পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ লক্ষ লক্ষ টাকার দামি মেশিন পড়ে খারাপ হচ্ছে, অভিযোগ রোগীদের। অথচ এব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। পাশাপাশি ওপিডিতে লিখে দেওয়া চিকিৎসকের সামান্য রক্তের পরীক্ষাও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে হয় না এমনটাই জানিয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসা রোগীদের একটা বড় অংশ। অনেক ক্ষেত্রে হসপিটাল সাপ্লাইয়ের ঔষধও মেলেনা বলে দাবি। তার পরিবর্তে নানান ঔষধ লিখে বিশেষ একটি দোকানে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এমনকী হাসপাতালে সাপ্লাই হওয়া লক্ষ লক্ষ টাকার দামি ঔষধ বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। আবার হাসপাতালের তরফে দেওয়া ওষুধের গায়ে দাম লেখা থাকার কথাও জানিয়েছে রোগী ও তাদের আত্মীয়রা।
রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালে না আছে পানীয় জল না আছে পরিষ্কার শৌচাগার। ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ওষুধ না পেয়েই ফিরে যেতে হয় অনেককেই। গ্যাঁটের কড়ি খসালেই হাসপাতালের পাশেই একটি নির্দিষ্ট ওষুধের দোকান থেকে অনায়াসেই মিলতে পারে সেই সব ‘আউট অফ স্টক’ ওষুধ। রোগীদের অভিযোগ এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারে বারে জানিয়েও কোন লাভ হয় নি।
হাসপাতালের চূড়ান্ত অব্যবস্থার বিষয়ে হাসপাতালের সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ছাত্র ভর্তি থেকে নানা ইস্যুতে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত। তবে অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের ওষুধ পান না সেকথা মেনে নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময় সাপ্লাইয়ে ঘাটতি থাকার কারণে কেউ কেউ হয়তো কোন ওষুধ সেই মুহূর্তে পান না তবে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তা আনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা অনেকক্ষেত্রেই করা হয় হাসপাতালের তরফে। তবে ওষুধ পাচার, বা বিশেষ কোন দোকান থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করার মতো অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছে, সরকার সব রকম ভাবে সাহায্য করছে। হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে এবং রোগীরা যাতে আরও ভাল পরিষেবা পান তার জন্য সর্বতভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে’।