ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে মুর্শিদাবাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মহিলা ম্যানেজার মীনাক্ষীমৃত্যু রহস্য কাণ্ড। নিত্য নতুন তথ্য আর পাল্টা তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারী দলের কাছে। মোড় বদলাচ্ছে প্রতি মুহূর্তেই।
নদীয়ার আনন্দ পল্লী এলাকার মেয়ে মীনাক্ষী বিশ্বাস কল্যাণীর বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের পর প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রঘুনাথপুর এলাকায় ২০১৩ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উলুবেড়িয়ায় বদলি হয়ে যান তিনি। সেখান থেকেই পদোন্নতি হয়ে চলতি বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার লালগোলা শাখায় ম্যানেজের হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন, মদ-জুয়ার মেলা চলছে রমরমিয়ে, লাটাগুড়ির পরিস্থিতি বদলাতে মরিয়া মহিলারা
মীনাক্ষীর কাকা উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ২০১৫-র ১৫ মার্চ বাড়ীর অমতেই তার বিয়ে এই রঘুনাথগঞ্জের বাহাদী নগরের বাসিন্দা রাজু সরকারের সঙ্গে। রাজুর চড়চড় করে উন্নতি হতে থাকে মীনাক্ষীর সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই। এক সময়ের টোটো চালক এই রাজু দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে একটি টোটোর শোরুম খুলে বসেন। ফুলে ফেঁপে ওঠে ব্যবসাও। পরবর্তীকালে ব্য়বসার একজন অংশীদারও জুটে যায় তাঁর। ব্যবসার জন্য বারুইপুর এবং রঘুনাথগঞ্জ- দু জায়গাতেই যাতায়াত করতে হত রাজুকে।
এর মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য অশান্তি। বাড়তে থাকে মীনাক্ষী ও রাজুর দূরত্ব। জানা গিয়েছে, ঝগড়াঝাঁটি মাঝেমাঝে গড়াত হাতাহাতিতেও। মীনাক্ষী অবশ্য কর্মক্ষেত্রে এই সবের কোন প্রভাব পড়তে দিতেন না। কিন্তু চাপ বাড়ছিল তাঁর ওপর। এরপর গত১২ নভেম্বর তিনি রঘুনাথগঞ্জ থেকে লালগোলার উদ্দেশে রওনা দেন বলেই শ্বশুরবাড়ীর সকলে জানতেন। তবে একটা ফারাক ছিল। সেদিন রোজকার মত ড্রাইভারকে সঙ্গে না নিয়ে একাই বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। কার্যত বাড়ির চৌকাঠ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর গাড়ির চালককে। এর পর থেকেই আর তাঁর কোনও হদিশ মেলেনি। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার তাপস সিংহ জানিয়েছেন, "ওই দিন মীনাক্ষী দেবী একাই বাড়ী থেকে বের হয়েছিল। তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন এই জেলার মধ্যে কিছুক্ষণের জন্যে পাওয়া গিয়েছিল। তার পরেই ফোন সুইচ অফ করে দেওয়া হয়।"
পুলিশ জানিয়েছে, মীনাক্ষীর স্বামী রাজু ঘটনার দিন বারুইপুরেই ছিলেন। তিনি ফোনে জানতে পারেন সন্ধ্যার পরও স্ত্রী ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফেরেননি।এরপরই তড়িঘড়ি রঘুনাথগঞ্জের দিকে রওনা দেন রাজু। পরদিন তিনি নিজেই থানায় মিসিং ডাইরিও করেন।
তদন্তকারী অফিসার তাপস সিংহ জানিয়েছেন," অভিযুক্ত রাজুর সঙ্গে মৃতার সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছিল, তা অনেকটাই স্পষ্ট, তবে ঘটনার দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানতে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে"।
আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন মৃতার স্বামী। তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন জঙ্গিপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের ম্যজিস্ট্রেট।
মীনাক্ষী-রাজুর ছোট্ট সন্তান এখন রয়েছে মীনাক্ষীর মাসি প্রীতি মজুমদারের হেফাজতে।