Advertisment

'মন্ত্রপূত দই' বন্ধে অভিযান, ওসি সহ জখম ১২

উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন স্থানীয় মানুষও। গুরুতর জখম অবস্থায় ওসিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
murshidabad bangla news

ঘটনাস্থলে টহল দিচ্ছে র‌্যাফ। জখম হরিহরপাড়ার ওসি। ছবি- পরাগ মজুমদার

Advertisment
'মন্ত্রপূত দই' দিয়ে দিব্যি মারণ ক্যানসার সারানোর পসার জমে উঠেছিল হরিহরপাড়ার খলিফাবাদ গ্রামে। ক্রমশ বুজরুকির বহর বাড়তেই তা নজরে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের। অভিযোগ, বুজরুক আমজাদ শেখ পরিস্থিতি বুঝে পিঠটান দেয়। এই পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও বৃহস্পতিবার আচমকা পুলিশি হানায় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে।
আমজাদের দেখা না পেলেও দূরদূরান্ত থেকে আসা তার অগণিত ভক্ত পুলিশ বাহিনী (মহিলা সহ), প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের ওপর দফায় দফায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। অভিযোগ, ইট, পাথর আর লাঠি দিয়ে পুলিশকে তাক করে ক্ষুব্ধ জনতা মুহূর্মুহ আক্রমণ করতে থাকে। মুড়ি মুড়কির মত পুলিশ ও তার গাড়ির ওপর বর্ষিত হয় ইট। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন হরিহরপাড়া থানার ওসি আব্দুস সালাম সহ প্রায় ১২ জন পুলিশ কর্মী। ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন স্থানীয়রাও। গুরুতর জখম ওসিকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) অনীশ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ ঘটনাস্থলে যায়। পৌঁছন বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যালও। চলছে পুলিশি টহলদারী। এই ব্যাপারে জেলার এক উচ্চ পুলিশ আধিকারিক বলেন, "এদিন পুলিশ এলাকা পরিদর্শনে গেলে একদল বহিরাগত পুলিশ বাহিনী ও গাড়ির ওপর হামলা চালায়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমজাদের খোঁজে  তল্লাশি চলছে।"
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হরিহরপাড়ার খলিফাবাদ গ্রামে রব ওঠে, এলাকার এক দর্জি আমজাদ শেখ রাতারাতি মন্ত্রপূত দই দিয়ে শরীরের যে কোন স্থানের ক্যানসার সারিয়ে দিচ্ছেন। এই বুজরুকি ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের ভগীরথপুর, রেজিনগর, বেলডাঙ্গা, জঙ্গিপুর, কান্দি, লালবাগ থেকে হাজারে হাজারে মানুষ কাকভোরে আমজাদের দুয়ারে দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে এসে হাজির হতে থাকেন। ভিড় এতই বাড়তে থাকে যে, গ্রাম ছাড়িয়ে বড় রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কার্যত আমজাদের এই পসার ঘিরে এলাকায় অলিখিত মেলায় হরেক দোকানও বসে। যদিও এক্ষেত্রে টাকা-পয়সার লেনদেনের কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত মেলেনি।
এরই মধ্যে জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ ও এলাকার বুদ্ধিজীবী মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে পুলিশ এই দই পড়া বন্ধ করতে দিন দুয়েক আগে ওই গ্রামে হানাও দেয়। এক বিক্ষোভকারীর দাবি, ‘‘আমজাদ গরিব মানুষের ভালো করছিলেন। কোনও পয়সা না নিয়েই চিকিৎসা হচ্ছিল। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আমাদের মতো গরীব মানুষদের সেই সামর্থ্য নেই। পুলিশ জোর করে ওনাকে এলাকা ছাড়া করেছে।" অবশ্যই এই দাবির পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কোনও কারণ নেই।
এই দুঃসাহসিক আক্রমণের ঘটনায় জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার। যেভাবে উত্তেজিত জনতা বুজরুকি আর অন্ধ বিশ্বাসকে প্রশ্রয় দিতে এই হামলা চালালো তাতে স্পষ্ট, আগামী দিনে মানুষের অনেক বেশি করে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। তা নাহলে এই সমাজের ধ্বংস অনিবার্য।"
police government of west bengal Murshidabad
Advertisment