Advertisment

জিয়াগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার শূন্য, পথে গেরুয়া শিবির

রাজীব বলেন,“চিৎকার করতেই কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা একটি লোক পাশের ঘর থেকে ছুটে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।”

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
murshidabad murder

বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে মৃত বন্ধু প্রকাশ পালের বাড়ির সামনে ভিড়। ছবি- পরাগ মজুমদার।

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে একই পরিবারের তিনজন খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এই হত্যালীলা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহারা দাবি, রাস্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হওয়ার জন্যই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই রাজ্য বিজেপি-র এই প্রাক্তন সভাপতি। খুনের নৃশংসতা দেখে পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই খুন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন।

Advertisment

বিজয়া দশমীর উচ্ছ্বাসের মাঝে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ শহরে বাড়ির ভিতরে স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর সন্তান সম্ভবা স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও তাঁদের নাবালক ছেলে বন্ধু অঙ্গন পালকে খুনের ঘটনায় এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি থেকে সোশাল মিডিয়া। মুর্শিদাবাদের বিজেপির সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষের দাবি, "ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে ওই আর এস এস কর্মীর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ৭২ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমরা এবার এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছি"। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যও। এদিকে, রাজ্যপাল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। এরপরই এদিন রাজ্যপালকে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

murshidabad jiaganj murder মৃত বন্ধু প্রকাশ পালের পরিবার। ছবি- পরাগ মজুমদার

এদিকে জেলা পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ রয়েছে বলে মনে করছে না। নৃশংস হত্য়াকাণ্ডের পর ২ দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার করা হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। ঘটনার 'মোডাস অপারেন্ডি' (যেভাবে অপরাধটি ঘটেছে) নিয়েও দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। জেলা পুলিশ মহলের কর্তারা এই ভয়ঙ্কর খুনের কিনারায় কোমর বেঁধে নেমেছেন। এই ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন, "ঘটনার কারণ স্পষ্ট নয়। তবে কতগুলি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, মৃত ওই স্কুল শিক্ষক শিক্ষকতা ছাড়াও অন্য কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সেক্ষত্রে তাঁর আদি বাড়ি সাগরদিঘি থানা এলাকা থেকে স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িয়ে পড়ার ফলেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, যে বা যারা এই বীভৎস ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে এই পরিবারের খুব পরিচিত কেউ যুক্ত থাকারও প্রবল সম্ভবনা রয়েছে।"

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মতে, ঘটনাস্থলে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুমান, মৃতরা কেউ খুনের সময় কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। তাঁদের খাবারের সঙ্গে মাদক বা নেশাদ্রব্য মিশিয়ে দেওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে। এর ফলে ওই পরিবারের লোকেরা অল্পতেই কাহিল হয়ে গিয়ে থাকতে পারেন"। এখানেই শেষ নয়, ওই পুলিশ আধিকারিক আরও বলেন, "পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতা বিউটি পালের লেখা একটি নোট ও ডায়রি উদ্ধার করেছে। সেখানে তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইঙ্গিতও মিলেছে। যদিও ডায়রি এবং ওই নোট দুটির হাতের লেখা যে বিউটিদেবীরই তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে"।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় সদালাপী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন গোসাঁই গ্রাম সাহাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার ভাগিরথী লাগোয়া ১৬ নং ওয়ার্ডের কানাইগঞ্জ লেবুবাগানে পরিবার নিয়ে বছর আড়াই ধরে বসবাস করছিলেন তিনি। বন্ধু প্রকাশবাবুর আদি বাড়ি সাগড়দিঘি থানা এলাকায়। মৃত ব্যক্তিদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও দুষ্কৃতীরা মূলত প্রত্যেককে গলা কেটে খুন করেছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। খুনের নৃশংসতা দেখে স্থানীয়দেরও অনুমান, চরম আক্রোশ কিংবা বদলা নেওয়ার মানসিকতা থেকেই এই খুন হয়ে থাকতে পারে। একই কায়দায় খুনের ঘটনাটি ঘটায় পরিবারের সদস্যদের প্রাথমিক অনুমান, এই খুনের সঙ্গে কোনও পেশাদার খুনির যোগ থাকাতে পারে।

এই খুনের রহস্য ভেদ করতে পুলিশ ছুটেছে মৃত বন্ধুপ্রকাশের আদি বাড়ি সাগরদীঘি থানার সাহাপুর গ্রামে। সেখানে মৃত শিক্ষকের মা থাকেন। জানা গিয়েছে, তাঁর বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান ছিলেন বন্ধুপ্রকাশবাবু। সেক্ষেত্রে প্রথম পক্ষের ভাই বোনেদের সঙ্গে সম্পত্তির বিবাদ ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আবার এল আই সি এজেন্ট হিসেবে বন্ধুপ্রকাশবাবুর কাজ কর্মের খোঁজ খবরও নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে গোঁসাইগ্রাম সাহাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান বন্ধুপ্রকাশ। পরে ছেলের পড়াশুনার কথা ভেবে জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকায় তাঁর মা মায়ারানী পালের কেনা জমিতে বছর দুয়েক আগে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। কিন্তু, এর মধ্যে কী এমন হল যে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত এক জন শিক্ষককে সপরিবারে এই ভাবে খুন হয়ে যেতে হবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুর পাক খাচ্ছে জিয়াগঞ্জ ও সাগরদীঘি জুড়ে।

জানা যাচ্ছে, দুধ বিক্রেতা রাজীব দাসকে ইতিমধ্যে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রাজীব বলেন, “প্রতিদিনের মতো ওই দিনও দুধ দিতে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা ঠেলতেই তা খুলে যায়, দেখি খাটের উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন প্রকাশবাবু। চিৎকার করতেই কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা একটি লোক পাশের ঘর থেকে ছুটে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।” রাজীবের চিৎকার শুনেই প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। দেখা যায়, একই ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে ছেলের মৃতদেহ। তবে বিউটিদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে পাশের ঘরে খাটের উপর থেকে। খুনের আগে বিউটি দেবী যে রান্না করছিলেন মৃতদেহ দেখে তাও স্পষ্ট।

Murshidabad
Advertisment