বাজি পুড়ছে, দীপাবলিতে আলোকময় চারদিক। কিন্তু সেখানে যেন একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করে রয়েছে। একটা মোমবাতির আলোও জ্বলেনি। অথচ এই ভিটেতেই প্রতিবছর কালীপুজোর সময় বাবার সঙ্গে হরেক রকমের টুনি বাল্ব দিয়ে বাড়ি সাজাত ছোট্ট অঙ্গন। বিজয়ার দিন সব ওলটপালট হয়ে গেল। দীপাবলির আলোর রোশনাইয়ে আঁধারেই ডুবে রইল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের পাল বাড়ি।
বিজয়ার দিন এ বাড়িতেই তিন জনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি , পুত্র অঙ্গন- তিন জনের দেহ উদ্ধার ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। সপরিবারে খুনের ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ ঘটনার পরই শোকে বিহ্বল লেবুবাগান এলাকা। দীপাবলির দিন সারা পাড়াজুড়ে থমথমে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। যেন কোনও অজানা ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে সকলের মনে। সবাই যেন দরজা-জানলা বন্ধ করে নিজের বাড়িতেই থাকতে চাইছেন।
আরও পড়ুন: মমতার ঘরে ঢুকে হতবাক রাজ্যপাল! কী বললেন তিনি?
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা ভারী গলায় বললেন, ‘‘বিশেষ কিছু আর বলার ইচ্ছে নেই। এই বাড়িতেই গত বছরও দীপাবলিতে আলোর রোশনাইয়ে ভেসে যেতে দেখেছিলাম আমাদের বন্ধুপ্রকাশকে। ওর ছোট ছেলেও বাবার সঙ্গে ছাদে হরেক রকমের টুনি বাল্ব দিয়ে বাড়ি সাজাত। আজ সব শেষ’’।
এবারের দীপাবলিতে অঙ্গনও নেই, তাই জ্বলেনি টুনি বাল্বও। দড়ি দিয়ে ঘেরা রয়েছে গোটা বাড়িটি। আশপাশে রয়েছে পুলিশি প্রহরা। আলোর উৎসবেও ওই অন্ধকার বাড়ি টিকে ঘিরে রহস্যের জাল এখনও বুনে চলেছেন জিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা। আরেক বাসিন্দা নিমাই সরকার বলেন, “দুর্গাপুজোর দশমীর দিন থেকেই এলাকাকে শোক গ্রাস করেছে। দীপাবলিতেও তার রেশ কাটেনি। ওই শোক ভুলে আলোর উৎসবে মেতে উঠতে পারেননি লেবুবাগানের বাসিন্দারা’’।
আরও পড়ুন: জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম করা নীল নকশা: অর্ডার দেওয়া চপার দিয়ে নিপুণভাবে খুন, গামছায় মোছা রক্ত!
অন্যদিকে, নম নম করে পালন করা হচ্ছে বন্ধুপ্রকাশের বেড়ে ওঠা সাগরদীঘি থানার সাহাপুর গ্রামের কালীপুজো। জানা গিয়েছে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির উল্টো দিকে সাহাপুর গ্রামে কালীর থান রয়েছে, সেখানে তাঁর উদ্যোগেই এতদিন কালীপুজো হয়ে এসেছে। গত বছরও সপরিবারে জিয়াগঞ্জ থেকে সাহাপুর গ্রামে এসে ওই শিক্ষক পুজার আয়োজন করেন। নিজের বাড়ি তো বটেই এলাকা সাজিয়ে দিয়েছিলেন রঙিন সব আলোকমালায়। এ ব্যাপারে বন্ধুপ্রকাশের ছোটবেলার বন্ধু টুটু মিত্র বলেন , “ও কালীপুজোর দিনে মোমবাতি আর মাটির প্রদীপ জ্বালাতে খুব ভালবাসত । আবার ওর উদ্যোগেই পাড়াতে পুজো হত। নিয়ম মেনে এবারও পাড়াতে পুজো হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেখানে নেই কোনও আড়ম্বর, জ্বালানো হয়নি মোমবাতিও”। এদিকে মৃতের মা মারারানী পাল হা-হুতাশ করে বলেন , “আমার জীবনের সব আলো শেষ। আর প্রদীপ বলে কিছুই থাকলো না,সব নিষ্প্রদীপ’’।