Advertisment

এক্কাগাড়ির দৌড় শেষ মুর্শিদাবাদে

ঘোড়ার গাড়ির চালকরা ঘোড়া বিক্রি করে দিতে শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। টাকার অভাবে যাঁরা অন্য ধরনের বাহন কিনে উঠতে পারেননি, তাঁদের কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ বা বিড়ি শ্রমিক হয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লুপ্তপ্রায় মুর্শিদাবাদের ঘোড়ার গাড়ি

দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে শীত। পর্যটকদের জন্য সেজে উঠছে নবাবনগরী মুর্শিদাবাদ। কিছুদিন আগেও মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ট্রেন থামতে না থামতেই পর্যটকদের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত টাঙাওয়ালাদের মধ্যে। সে সুখের শীতকাল আর নেই টাঙার। পিচের রাস্তায় ঘোড়ার খুরের আওয়াজ ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে।

Advertisment

ইতিহাস হারানোর কারণ অবশ্য ঐতিহাসিকই। সেই শিল্পবিপ্লবের সময়কাল থেকে যা ঘটে আসছে, মুর্শিদাবাদে এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। ইঞ্জিনচালিত মোটরগাড়ি, তার বহু অশ্বশক্তির ক্ষমতার কাছে পরাভূত হয়েছে এক অশ্বচালিত এক্কা। খরচ ওঠে না। ফলে যা হওয়ার তাইই হয়েছে।

আরও পড়ুন, জেল বদল: আলিপুর চলল বারুইপুরে

ইংরেজ আমলে তৎকালীন বাংলা, বিহার আর উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদের নবাবরা তাঁদের  যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হিসেবে চালু করেছিলেন এই টাঙা গাড়ি। কালক্রমে শুধু নবাবরাই নয়, সাধারণ মানুষদের পরিবহণের মাধ্যম হয়ে ওঠে এই টাঙা। কাজে লাগানো হতে থাকে মাল পরিবহণেও। নবাবি আমল ছেড়ে এ আমলেও, এই কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কুটুমবাড়ি কিংবা বিয়েবাড়ি যেতেও ভর করা হত এই টাঙাওয়ালাদের উপরেই। কম খরচে মাল পরিবহণের জন্য ব্যবসায়ীদের অন্যতম ভরসা ছিল এই টাঙাই, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত। লালবাগ তো বটেই, বাসুদেবপুর, ব্যাংডুবি, সাজুর মোড় এসব জায়গার ঘোড়ার গাড়ি স্ট্যান্ড বহুল পরিচিত ছিল সকলের কাছে।

publive-image মুর্শিদাবাদের নিজস্বতার অন্যতম ছিল এক্কা

এখন টাঙার জায়গা নিচ্ছে টোটো। ঘোড়ার গাড়ির চালকরা ঘোড়া বিক্রি করে দিতে শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। টাকার অভাবে যাঁরা অন্য ধরনের বাহন কিনে উঠতে পারেননি, তাঁদের কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ বা বিড়ি শ্রমিক হয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব রমজান আলি বলছিলেন, ‘‘ঘোড়া রাখতে পারিনি। কিন্তি গাড়িটাকে যত্ন করে রেখে দিয়েছি। মায়ার টান...।’’ বাসুদেবপুরের ঘোড়ার গাড়ির চালাতেন মোস্তাকিম শেখ। এ পেশা তাঁর বাপ-ঠাকুর্দার আমলের। নিজে গাড়ি চালিয়েছেন তিরিশ বছর। মোস্তাকিম বিড়ি শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন। সংসার টানতে এখন তিনি বিড়ি বাঁধেন।  নাদির শেখ হয়ে গেছেন রাজমিস্ত্রি।  ঘোড়াসমতে গাড়ি নিয়ে অনেক দৌড়েও যাত্রী না পেয়ে বৃদ্ধ বয়সে নতুন পেশা বাছতে হয়েছে তাঁকে। ঘোড়ার গাড়িতে যেখানে পৌঁছতে ৩০ মিনিট লাগত, যন্ত্র চালিত গাড়ি সেই গন্তব্যেই পৌঁছে দিচ্ছে অর্ধেক সময়ে। ফলে যা হওয়ার ছিল তাই হয়েছে।

সে কথাই শোনা গেল নবাবের বংশধর লালবাগের ছোটে নবাব বলে পরিচিত সৈয়দ রেজা আলী মির্জার মুখেও।" সবই সময়ের খেল। এই সেদিনও দেখেছি শহর জুড়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াত ঘোড়ায় টানা গাড়ী, পর্যটকরাও  এই শহর দর্শন করতেই ঘোড়া গাড়ীতে চড়েই। আস্তে আস্তে আজ তা স্মৃতি হয়ে গেল"।

এলাকার বা সংলগ্ন অঞ্চলের অধিবাসীরা টাঙাকে প্রত্যাখ্যান করলেও, পর্যটকদের একাংশ কিন্তু এ নিয়ে হতাশ। তেমনই একজন রঞ্জন বাগচি। বেলেঘাটা থেকে এসেছেন। বললেন,  "স্কুলে পড়তে বাবার সাথে এখানে এসেছি বার দুয়েক। ট্রেন থেকে নামতেই ঘন কুয়াশায় পর্যটক ধরতে রীতিমত সুর করে হাঁক দিতেন ওই টাঙাওয়ালার। সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। আজ অবশ্য কেউ আর সে ভাবে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ডাকলেন না"।

Advertisment