কাটমানি নিয়ে মুখ খোলায় বড়ঞা থানার ওসিকে শোকজ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমারের। 'প্রকাশ্যে কেন এই ধরনের মন্তব্য?', বড়ঞার ওসি সন্দীপ সেনের জবাব তলব এসপি-র। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই শোকজের জবাব পাঠিয়েও দিয়েছেন বড়ঞা থানার ওসি।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই কালীপুজো উপলক্ষে এলাকার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাজের বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেন। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই এলাকার বেহাল রাস্তা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কাটমানি-অভিযোগে সরব হন ওসি। কাটমানি ভাগাভাগি করে নিতে গিয়েই সাধারণ মানুষের কাজে পর্যাপ্ত টাকা ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন ওসি সন্দীপ সেন।
ঠিক কী বলেছিলেন ওসি?
ওসি সন্দীপ সেন বলেছিলেন, ''কাটমানি-লাভ রেখে ২৫ শতাংশ টাকায় কী কাজ হবে? ১০০ টাকায় ৪০% লেস করে রাস্তা তৈরি করবে। নিজে খাবে ২০ শতাংশ টাকা, ব্লক অফিসে দেবে ৪ শতাংশ টাকা। আগের ওসিদের ৫ শতাংশ, বাকি আরও ৫ শতাংশ কাটমানি। ৭৫ শতাংশ দিতে হলে ২৫ শতাংশ টাকায় কাজ হবে?''
প্রকাশ্যে একজন ওসির এই ধরনের মন্তব্যে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। বিরোধীরাও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধে সমালোচনার ঝড় তোলে। খোদ জেলার একটি থানার ওসির মুখে কাটমানি-অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তি বাড়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ মহলেও। শেষমেশ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার শোকজ করেন বড়ঞা থানার ওসি সন্দীপ সেনকে। 'প্রকাশ্যে কেন এই ধরণের মন্তব্য?' ওসির জবাব তলব করেন এসপি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই এসপি-কে শোকজের উত্তর দিয়েছেন ওসি। তাঁর উত্তরের সঙ্গেই গ্রামবাসীদের গণস্বাক্ষর করা একটি চিঠিও এসপি-কে পাঠিয়েছেন ওসি। জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগেই গ্রামের বেহাল রাস্তা নিয়ে ওই গণস্বাক্ষর সম্বলিত চিঠিটি ওসি-কে দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুন- ‘ডিয়ার লটারি ভাইপোদের কালো টাকা সাদা করার পন্থা’, সরব শুভেন্দু
এদিকে, কাটমানি নিয়ে মুখ খোলায় বড়ঞার ওসিকে শোকজ করায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ''এটা আবার প্রমাণ হল চোর পুরস্কৃত হয়, সাধু তিরস্কৃত হয়। বড়ঞা থানার ওসি সত্য তুলে ধরেছেন। এরাজ্যে আজ এটা ধ্রুব সত্য ও বাস্তব। সত্য বলার জন্য সরকারের উচিত ছিল তাঁর থেকে তথ্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি জনগণের কল্যাণের কথা বলেছেন। কাটমানিখোরদের বিরুদ্ধে বলেছেন। তার মানে এরাজ্যে কর্ম, শ্রমের মূল্য নেই। টাকা যে ওপর পর্যন্ত যায়, তার প্রমাণ এই শোকজ।''
অন্যদিকে, বাম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য বলেন, ''একজন অফিসার সত্য বলেছেন বলে পুলিশ সুপার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন। ডিজি বা এসপিকে দায়িত্ব নিয়ে দেখা উচিত যে কাটমানি পুলিশ মহলে কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে। এরাজ্যে যে দুর্নীতি করবে তাকে পুলিশ প্রোটেকশন দেবে। যে সাহস করে সত্যিটা বললেন তাকে শোকজ করল। এটাই বোঝা যাচ্ছে যে এসপি-ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত।''