Advertisment

জিয়াগঞ্জ হত্যা রহস্য: খুনের পিছনে কি ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা?

রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ বলেন, “তদন্তের কাজ অনেকটাই গুটিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Jiaganj Murder

জানা গিয়েছে, বাড়তি টাকার লোভ দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলতেন নিহত বন্ধু প্রকাশ (ছবি- পরাগ মজুমদার)

রবিবার সন্ধ্যায় টান টান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে জিয়াগঞ্জে শিক্ষক পাল পরিবারের খুনের ঘটনায় সিআইডি-র বিশেষ টিম ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের হাতে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। মিলল ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলার যোগের ইঙ্গিত। সেই সঙ্গে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ক্লুও। তবে এখনই সংবাদ মাধ্যমের কাছে যবনিকা পুরোপুরি তদন্তের স্বার্থে টানতে রাজি নন সিআইডি দল থেকে জেলা পুলিশ কেউই। তাই আরও বেশি করে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

Advertisment

এদিকে যাদের ঘিরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্যের পারদ চড়ছে সেই পাল পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শৌভিক বণিককেও পুলিশ আটক করে রেখেছে এখনও বলেই সূত্রের খবর। তাঁকে দফায় দফায় ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেই রবিবার গভীর রাতে হয়ত বড়সড় কোন সাফল্য আসতে চলছে বলেই স্থানীয় পুলিশের অনুমান। তবে মৃত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের সঙ্গে যে শৌভিকের মোটা টাকার লেনদেন ছিল সে ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসাররা সন্ধ্যার পরে পাকাপাকি ভাবে নিশ্চিত হন।

পুলিশের অনুমান, এই টাকা পয়সার লেনদেনের কারণেই খুন করা হয়ে থাকতে পারে পাল পরিবারকে। তাহলে শৌভিককে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং এর সঙ্গে আরও বড় চক্র যুক্ত আছে কি না, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেই চক্রের নাগাল পেতেই এখন পুলিশের নজর এখন রামপুরহাট, সিউড়ি, ও ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ডের দিকে।

Jiaganj Murder তদন্তে সিআইডি অফিসাররা (ছবি: পরাগ মজুমদার)

রামপুরহাটের বাসিন্দা শৌভিককে পুলিশ শুক্রবার রাতে সিউড়ির একটি হোটেল থেকে আটক করে। এই ব্যাপারে রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ বলেন, “তদন্তের কাজ অনেকটাই গুটিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। দ্রুত এই ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।” তবে এই খুনের জন্য কোনও 'সুপারি কিলার' বা ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন জেলার পুলিশ সুপার। সম্ভবত  সেই সুপারি কিলারের সন্ধানে জেলার অপর একটি পুলিশ বাহিনী হন্যে হয়ে ছুটছে বীরভূম ও ঝাড়খণ্ডের রাস্তায়।

বিজয়া দশমীতে জিয়াগঞ্জ লেবুবাগান এলাকায় গলা কেটে খুন করা হয় শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী বিউটি পাল ও তাঁদের পুত্র অঙ্গন পালকে। এই ঘটনায় পুলিশ ও সিআইডি একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই খুনের কিনারা করতে পারেনি। অবশেষে এই ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন রামপুরহাটের বাসিন্দা শৌভিক বণিককে দু'দিন ধরে আটক করে নাগাড়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।

শৌভিকের বাড়ি তল্লাশি করে বেশ কিছু নথি পেয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, শৌভিকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা ও বিমা সংস্থায় টাকা তোলার কাজ করতেন মৃত ওই শিক্ষক। নিজেরাই একটি লগ্নি সংস্থা খুলে ব্যবসা করবেন বলে স্থিরও করেছিলেন দুই বন্ধু । জানা গিয়েছে, বাড়তি টাকার লোভ দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলতেন বন্ধুপ্রকাশ। পরে নাকি ওই টাকা শৌভিককে দেওয়া হতো। বর্তমানে চড়া সুদে টাকা খাটিয়ে আমানতকারীদের টাকা শোধ দেওয়ার কারবারে মনোযোগী হয়েছিলেন তাঁরা। এদিকে সময়মত মানুষের টাকা দিতে না পারায় এলাকার মানুষ চাপ দিতে শুরু করেন বন্ধুপ্রকাশের উপর। একই ভাবে মাসখানেক থেকে বন্ধুপ্রকাশের ওপর শৌভিক টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করে ও টাকা ফেরত না দিলে ভাল হবে না বলেও হুমকিও দিতে থাকে। সে কারণেই কি সপরিবারে শেষ করে দেওয়া হল পাল পরিবারকে?

প্রশ্নের জবাবে জেলার এক পুলিশ অফিসার বলেন, “অনুমান করা হচ্ছে, শৌভিক বাইরের পেশাদারকে কাজে লাগিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আবার স্থানীয় মানুষের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা পেশাদার খুনিরা ঘটনার চার পাঁচদিন আগে থেকে রেকি চালায়। পরিকল্পনা মাফিক এই খুন, তাতে সন্দেহ নেই।”

এদিকে মৃত শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী বিউটি দেবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বন্ধুপ্রকাশের মাসতুতো ভাই তথা জিয়াগঞ্জ থানায় প্রথম অভিযোগকারী নবগ্রামের বন্ধুকৃষ্ণ পাল জানান, "থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে আমি খুব আতঙ্কে আছি। পথে ঘাটে অজানা আক্রমণের মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।"

West Bengal Murder
Advertisment