এক রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। পদ্মা ভাঙন তো ছিলই সঙ্গে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে গঙ্গার জল এলাকার নানান বাঁধ ভেঙে বসতিতে প্রবেশ করায় শয়ে শয়ে বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, সোমবার বিকেলের পর থেকে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় ব্যাপক ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে ফারাক্কার হোসেনপুর-সহ সামশেরগঞ্জ, কামালপুর, চাঁদপুর, ইসবপুর, ইসলামপুর ও ভগবানগলা, লালগোলার ময়ার বিস্তীর্ণ জনপদে। এখানেই শেষ নয়, এদিন জল বিপদ সীমার উপরে আরও উঠে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সংযোগ রক্ষাকারী সামশেরগঞ্জ থানার একমাত্র পাকুড়-ধূলিয়ানগামী রোড বরাবর প্রায় ৭০-৮০মিটার অংশ ধ্বসে বসে গিয়ে কার্যত গভীর খাতের সৃষ্টি হয়ে চরম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
খবর পেয়েই নব নিযুক্ত জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনার নির্দেশে জেলা পিডব্লিউডি-সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা সেখানে পরিস্থিতি নজরে রাখতে হাজির হয়েছেন। আপাতত জরুরিকালীন অবস্থায় পাকুড়-ধূলিয়ান গামী সমস্ত ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশি।এই ব্যাপারে থানার ওসি অমিত ভকত বলেন,"এখানে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, ফলত যে কোনও ধরনের বড় বিপদ বা ধ্বস নেমে রাস্তায় কোনও প্রাণহানি না ঘটে তার নজরদারি শুরু হয়েছে"। অন্যদিকে ভগবানগোলার হনুমন্তনগর গ্রাম পঞ্চায়েত, আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন। ভাঙন বিদ্ধস্ত এবং জলবন্দি মানুষ সেলিম শেখ,বাপন শেখ ও সাইরা বিবিরা বলেন,পদ্মা যে ভাবে ফুঁসছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে গিলে খাবে এই এলাকা।পুরো জলে তলিয়ে যাওয়া এখন অপেক্ষা মাত্র।
এই ব্যাপারে সেচ দফতরের মহকুমা বাস্তুকার প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন , “ ইতিমধ্যে আমরা সাড়ে তিনশো মিটার এলাকার একটি স্কিম নিয়েছি । তার আগেই বন্যা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশের দিক থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে । আমরা প্রতিনিয়ত ওই এলাকায় যাচ্ছি এবং মানুষ কে অযথা আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিচ্ছি । অন্যদিকে ভয়াবহ আকার নেওয়ার আগে কি করা যায় তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে"।পদ্মা নদী রানিতলার দুই সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খাম খেয়ালি পদ্মা নিয়ম করে কখনও ভগবানগোলা ১ নং ব্লক-কে তলিয়ে নিয়ে গিয়েছে তো কখনও ২ নং ব্লক-কে গ্রাস করেছে নিজ বক্ষ। ফলে কয়েক বছরে দুই ব্লকের মান চিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে । এদিকে পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়েছেন কেউ আবার ফসলি জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন । স্বাভাবিক ভাবে ভাঙন দেখা দিতেই ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে হনমন্ত নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে সদ্য ভাঙন রোধের কাজ শেষ বাবুপুর ভাঙন প্রবণ এলাকা নিয়ে । স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ক্যারেট প্রতি যেখানে ২৫ টি বস্তা দিয়ে ভাঙনের রোধের কাজ করার কথা সেখানে এক শ্রেনীর অসাধু মানুষের সাহায্য নিয়ে ১৪ -১৫ টি বস্তা দিয়ে ক্যারেট করা হয়েছে। ফলে বাবুপুরের ওই বাঁধ কে ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা।তবে চরবিনপাড়া এলাকার লহরামারী এলাকায় যে ভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে যে কোনও সময় তলিয়ে যেতে পারে স্থানীয় সীমন্ত রক্ষী বাহিনীর চৌকি। এই পরিস্থিতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি সরকারি কোনও আধিকারিককে ,মেলেনি কোনও সাহায্য। তার পরেও ওই সব মানুষ গুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি প্রশাসনিক স্তরে। এমনকি, মেলেনি সামান্য ত্রাণটুকুও। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফুঁসছেন প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে বিকেলের পর থেকে আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষমারী ,পাইকমারী ,ঘোষপাড়া ও মাঝ চরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। পদ্মার জল প্লাবিত হয়ে ঢুকে পড়েছে এলাকার ঘরবাড়িতে। কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা । জলের তোড়ে অনেকের বাড়ি ভেঙে পড়েছে । বাড়িতে সংগৃহীত খাবার জলে ভেসে গিয়েছে। এই ব্যাপারে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুলুয়ারা বিবি বলেন, “দেরি করে হলেও আমরা ত্রাণ নিয়ে এলাকার মানুষের কাছে গিয়েছি। জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছি ।”