Advertisment

মুসলিম শিল্পীর হাতে তৈরি রামের মূর্তি, অযোধ্যার মন্দির সাজিয়ে তুলতে প্রাণপাত জামালউদ্দিনের

বাংলার জামালউদ্দিনের হাতের তৈরি রামের মূর্তি পাড়ি দিল অযোধ্যায়, ঐক্য-সম্প্রীতির এ যেন এক অনন্য নজির....

author-image
Sayan Sarkar
New Update
West Bengal, Ram Mandir in Ayodhya, ram statue, muslim sculptors, ram temple, ayodhya temple",

মুসলিম শিল্পীর হাতে তৈরি রামের মূর্তি, অযোধ্যার মন্দির সাজিয়ে তুলতে প্রাণপাত জামালউদ্দিনের

লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে দেশবাসীকে রামমন্দির নিয়ে বিরাট চমক দিতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। জানুয়ারিতেই রামমন্দির উদ্বোধন। এর মাঝেই সামনে এসেছে চমকে দেওয়ার মত এক খবর। অযোধ্যা মন্দিরের জন্য রামের মূর্তি গড়লেন দত্তপুকুরের শিল্পী জামালউদ্দিন। ছেলে বিট্টুকে সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যেই গড়েছেন ১৭ ফুটের সুবিশাল রামের মূর্তি। তা ইতিমধ্যেই পাড়ি দিয়েছে অযোধ্যার উদ্দেশ্যে। মুসলিম হয়েও রামের মূর্তি গড়ার অনুভূতি প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, "ভালবাসা-সম্প্রীতি-ঐক্যের এটাই তো চেনা ছবি। এটাই আমার দেশ। ধর্ম যার যার শিল্প তো সবার"।

Advertisment

জানুয়ারিতেই অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। ২২ জানুয়ারি নিজের হাতেই রামলালাকে নতুন মন্দিরে প্রবেশ করাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী! জমকালো আয়োজন চমকে দেবে। ট্রাস্ট-এর তরফে জানানো হয়েছে, উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যজমানের ভূমিকা পালন করবেন। অর্থাৎ পুজোর আয়োজনের অনেকটাই তিনি নিজে হাতে করবেন।

অস্থায়ী মন্দিরে থাকা রামলালার মূর্তি নিজের কোলে করে নিয়ে অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরে গর্ভগৃহে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী। রামমন্দির নির্মান কমিটির সূত্রে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রী রামের মহিমান্বিত পুজো উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, রামলালার মূর্তি কোলে নিয়ে নিয়ে নতুন মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গর্ভগৃহ মানে সেই অংশ যেখানে রামলালা তাঁর স্থায়ী আসনে বসবেন।

রামলালার ৫ ফুটের মূর্তিটি প্রায় ৫০০ মিটার কোলে নিয়ে মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ঋষি-সাধুরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। প্রাণ প্রতিস্থার আগে শ্রী রামের কাছে একটি প্রার্থনা করা হবে, তারপরে তাকে তার স্থায়ী আসনে বসানো হবে। দেশের একাধিক পবিত্র নদীর জল দিয়ে শ্রী রাম লালার মূর্তিকে স্নান করানো হবে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন হাজার হাজার ঋষি-সাধু।তারা দেশের বিভিন্ন পবিত্র নদী থেকে জল নিয়ে আসবেন। সমস্ত জল মিশিয়ে স্নান করানো হবে রাম লালার মূর্তিটিকে।

এত আয়োজনের মাঝে অযোধ্যার মন্দিরে রামের মূর্তি নিজের হাতে গড়েছেন দত্তপুকুরের শিল্পী জামালউদ্দিন। তাঁর হাতের সেই ১৭ ফুটের রামের মূর্তি ইতিমধ্যেই পাড়ি দিয়েছে অযোধ্যায়। তবে মন্দিরের কোথায় সেই মূর্তি বসবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই খবর জানাজানি হতেই শিল্পীর নিজস্ব স্টুডিওতে ভিড় বেড়েছে। রোজই সংবাদ মাধ্যমের আনাগোনা। বরাবরই লাইম লাইট থেকে দূরে থেকে নিজের হাতেই ফুটিয়ে তুলেছেন একের পর এক চোখ ধাঁধানো শিল্পকর্ম। কখন গনেশ, কখনও লক্ষ্মী আবার কখনও বজরংবলীর মূর্তি। বহু দূরদুরান্তে প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতি পৌঁছেছে। তবে এত কিছুর মাঝেও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শিল্পী বলেন, 'বহু বছর ধরে তিলে তিলে নিজের প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করিয়েছি। বহু মানুষ দেশের নানান প্রান্ত থেকে আমার শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। অর্ডারও মিলেছে বিস্তর। সেইভাবেই বরাত পাওয়া'।

প্রথমে এতবড় বরাত পেয়ে খানিক অবাক হলেও ছেলেকে নিয়ে কোমর বেঁধে আসরে নামেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করেন ১৭ফুটের রামের মূর্তি। শিল্পীর কাজ দেখে অনলাইনেই শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ। তারপর দামদর ঠিক করেই মেলে অর্ডার। তবে ধর্ম দিয়ে শিল্পকে বিচার করতে নারাজ শিল্পী জামালউদ্দিন। তাঁর কথায়, "একজন শিল্পীর শিল্পভাবনা এবং তার সৃষ্টিই তাঁর প্রথম ও প্রধান পরিচয়। সেখান জাত-পাতের কোন প্রশ্নই আসে না। একজন শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে। আর অযোধ্যার রামমন্দিরে আমার হাতের তৈরি মূর্তি বসতে চলেছে সেটা তো আমার কাছে গর্বের বিষয়" ।

পাশাপাশি রামমন্দির সেজে উঠতে চলেছে চন্দননগরের আলোতে। প্রতিবারই নবরাত্রি আর দশেরা উপলক্ষে সেজে উঠেছে গোটা অযোধ্যা। গত আট বছর ধরেই সেই বরাত পেয়ে এসেছে ভাল চন্দননগরের সাহা ইলেকট্রিকস। দীপাবলীর আগেই অযোধ্যা সাজাতে ৬৫ জনের একটি দল সেখানে গিয়ে তাক লাগানো আলোকসজ্জায় সকলকে চমকে দিয়েছেন। এবার আশা রামমন্দিরের আলোসজ্জার বরাতও পাবে সাহা ইলেকট্রিকস।

সাহা ইলেকট্রিকের কর্ণধার মনোজ সাহা বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর ধরে দীপাবলী-ধনতেরাস ও নবরাত্রি উপলক্ষ্যে অযোধ্যা নগরীর ১০ কিলোমিটার রাস্তার আলোকসজ্জার দায় বর্তায় তার ওপরেই। বছরের পর বছর তাঁর আলোকসজ্জা চমকে দিয়েছে সেখানকার মানুষজনকে। রামমন্দিরের উদ্বোধন ২২ জানুয়ারি। ইতিমধ্যেই রামমন্দির বাংলার আলোয় সাজিয়ে তোলার বিষয়ে আশাবাদী তিনি। মনোজ বাবু বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তবে এখনও টেন্ডার খোলা হয়নি। আমরা যেভাবে বছরের পর বছর ধরে অযোধ্যা নগরীকে আলোর ঝরনায় সাজিয়ে তুলেছি। আমরা আশাবাদী আমরাই রামমন্দিরের আলোকসজ্জার বরাত পাব’।

Ram Temple
Advertisment