/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/Coromandel-express-accident-howrah.jpg)
ঐশী চৌধুরীর বাবা স্বপণ চৌধুরী। ছবি- পার্থ পাল
সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে ততক্ষণে বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার ব্যাপকতা প্রকাশ্যে। নির্মম হলেও বাস্তব যে, ওই দুই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনেই বাংলার বাসিন্দাদের সংখ্যা বেশি। কারণ, আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুপুরে ছেড়েছিল শালিমার স্টেশন থেকে। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়ামুখী ছিল সুপারফাস্ট ট্রেনটি। ফলে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ রাজ্যেকে ক্রমশ বিষন্নতা গ্রাস করেছে। হাওড়া স্টেশনের হেল্পডেস্কের ফোনগুলো অহরহ বাজছিল। আর রাত বাড়তেই স্টেশনের হেল্পডেস্কে ওই দুই ট্রেনের যাত্রীদের আত্মীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। কেউ স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন, আবার অনেকের মুখে কোনও খবর না পাওয়ার যন্ত্রণা, আতঙ্ক।
স্বপণ চৌধুরী। বয়স ষাটের কোটায়। শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পৌঁছে যান হাওড়া স্টেশনে। তাঁর মেয়ে বছর ২৩য়ের ঐশী অভিশপ্ত বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রী। হেল্পডেস্ক থেকে সব জেনে বেরতেই স্বপণবাবুর মুখোমুখি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি। তখনও তাঁর দুঃশ্চিন্তার ঘোর কাটেনি। প্রশ্ন করা মাত্রও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃদ্ধ বললেন, 'আমার মেয়ে আহত কিন্তু বেঁচে আছে'। একটু জিরিয়ে স্বপণ চৌধুরী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার ফলে ট্রেনের কাচ ভেঙেছে। তাতেই মেয়ে কিছুটা টুকরো আঘাত পেয়েছে। ঐশী বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তির কর্মী। বাড়ি ফিরছিল সে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে- বাড়ি যে ফের প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। আপাতত সেটাই স্বপণের কাছে বিরাট প্রাপ্তি।
হাওড়া স্টেশনে ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হাওড়ামুখী বেঙ্গালুরু সুপারফাস্টের যাত্রী নাফিসা পারভীনের (২১)বাবা শেখ মইনুদ্দিনও (৫২)। হেল্পডেস্কে খোঁজ খবরের মাঝেই তাঁর ফোন বেজে উঠল। আর মোবাইলের ওপার থেকে মেয়ের কণ্ঠস্বরেই সব আতঙ্কের অবসান। শেখ মইনুদ্দিন বললেন, 'মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হল। ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও মেয়ে ঠিক আছে।' নাফিসা তিনি কর্ণাটকে নার্সিং করছেন এবং ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আরেক ব্যক্তি রিপন দাস (২৯)। পরিযায়ী শ্রমিক রিপনও কর্ণাটক থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর দাদা সুজয় দাসের (৩৩) মুখেও তখন চিন্তা অবসানের ছাপ। সুজয় বলেন, 'ভাইয়ের সঙ্গে যখন ফোনে কথা হল তখন সে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ছিল। ওর ঘাড়ে, কোমরে এবং পায়ে আঘাতের লেগেছে। কিন্তু প্রাণে বেঁচে গিয়েছে।'
জানা গিয়েছে, বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় শনিবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩৩, জখম ৯০০ জন। প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তবে নিহতরা প্রত্যেকেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বলে খবর।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/06/howrah-helf-desk.jpg)
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, ওড়িশা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে এবং মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বের বালেশ্বর যাচ্ছে একটি প্রতিনিধি দল। মুখ্যসচিবের কথায়, 'ইতিমধ্যে আহত যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলান্স সেখানে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলা ওড়িশা প্রশাসনকে আশ্বস্ত করছে যে আমরা প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিতে প্রস্তুত।'
দুর্ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার খবরে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই ট্রেনে পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ ছিলেন। সন্ধ্যার এই ঘটনায় বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে। উদ্ধারকাজের জন্য এ রাজ্য থেকে পাঁচ-ছয়জনের একটি টিম পাঠানো রওনা দিয়েছে। এই দল ওডিশা সরকার এবং রেল আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছবে। আমি নিজে গোটা বিষয়টি মনিটরিং করছি। সঙ্গে রয়েছেন মুখ্যসচিব এবং অন্য আধিকারিকরা।'
পশ্চিমবঙ্গের তরফে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নবান্নের তরফে ওডিশা সরকার এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যে নম্বরগুলি চালু করা হয়েছে সেগুলি হল, 033- 22143526/ 22535185. এছাড়া অন্য হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল, হাওড়া ডিভিশনের যাত্রীদের জন্য 033 2638 2217, খড়গপুর ডিভিশনের যাত্রীদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর হল 8972073925/9332392339, বালাসোর ডিভিশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর 8249591559/ 7978418322 এবং শালিমার ডিভিশনের জন্য 9903370746। বিপদগ্রস্ত যাত্রীদের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, যার নম্বর হল 6782262286।