Highcourt On RG kar Protest: ৯ অগাস্ট আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ‘নবান্ন অভিযান’-এর ডাক দিয়েছেন মৃত জুনিয়র চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের একাধিক সংগঠন ওইদিন ন্যায় বিচারের আদায়ে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অভিযানে ব্যাঘাত ঘটতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যে, অবনতি হতে পারে আইন-শৃঙ্খলার, এই আশঙ্কা জানিয়ে হাওড়ার এক ব্যবসায়ী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নাগরিকের মৌলিক অধিকার। ফলে ‘নবান্ন অভিযান’-এ কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করল না আদালত।
বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে’র ডিভিশন বেঞ্চে এদিন মামলার শুনানি হয়। মামলাকারীর আর্জি ছিল, প্রতিবাদ ঘিরে হিংসার আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে শহরের স্বাভাবিক জনজীবন এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক দেশের মৌলিক অধিকার, একে পুরোপুরি বন্ধ করা আইনত যায় না।’’ ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বিকল্প কোনও নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিবাদের অনুমতি দিতে পারে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে। তবে হিংসা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা আইনত অপরাধ। সংবিধানের ধারা ৫১এ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য—হিংসা বর্জন করা এবং সরকারি সম্পত্তির সুরক্ষা করা।’’
আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, পুলিশের উপর তাদের আস্থা রয়েছে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেই মনে করছে আদালত। জনস্বার্থ মামলায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে অবস্থান নিল।
আরজি কর মেডিকেল কলেজে ধর্ষণ ও খুনে তরুণী চিকিৎসকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৯ আগস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। রাজ্য সচিবালয় নবান্ন অভিমুখে এই প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই মিছিলের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) দায়ের করা হয়। হাওড়া জেলার নবান্ন সংলগ্ন মন্দিরতলা এলাকার বাসিন্দা, মামলায় দাবি করেছেন যে ওই দিন নবান্ন অভিযান হলে স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে। যানজট, নিরাপত্তা বিঘ্ন এবং জনজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তিনি আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে পদযাত্রা স্থগিত রাখার আবেদন জানান।
এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারীর বক্তব্য, অতীতে নবান্ন অভিযান ঘিরে এলাকায় বিশৃঙ্খলার নজির রয়েছে। তাই এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যদিও ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের সেমিনার হল থেকে তাঁদের মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের বর্ষপূর্তির শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এই ঘটনার জেরে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশে। ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন বহু মানুষ। সেই আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ফের পথে নামছেন সাধারণ মানুষ। আগামী ৯ অগাস্ট নবান্ন অভিযানে রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল সমর্থন জানালেও নবান্ন অভিযানে কোন দলীয় পতাকা ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে পরিবারের তরফে। যদিও নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের তরফে তৃণমূল কংগ্রেসকে মিছিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতেই হবে। বুধবারও তিনি তাঁর পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অভিযোগ করেন, প্রতিবাদকে দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার।