অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলেই মনে করেন ভক্তরা, নৈহাটির বড়মা-কে দেখতে কালীপুজোয় প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান। এবার থেকে বড়মাকে বছরভর দেখতে পাবেন ভক্তরা। 'বড়মা' তৈরি হচ্ছে কষ্টি পাথরে, 'জাগ্রত' দেবীর দর্শন এবার বছরভর ধরেই পাবেন ভক্তরা। পাশাপাশি নৈহাটির মানুষের আবেগের কথা বিবেচনা করে শীঘ্রই নাম বদল হতে চলেছে নৈহাটি-চুঁচুড়া ফেরি সার্ভিসের।
প্রতিদিন প্রায় হাজার দশেক মানুষ বড়মা’র মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে গিয়েই ফেরি পারাপার করেন। বড়’মার প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আবেগকে সম্মান দিয়েই এবার নৈহাটি পুরসভার উদ্দোগে নৈহাটি মেছুয়াবাজার ফেরি সার্ভিসের নাম বদলে হচ্ছে নৈহাটি বড় মা ফেরি সার্ভিস। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে পাস হয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত প্রস্তাবও। রাজ্যের সিল মোহরের অপেক্ষায় দিন গুনছেন নৈহাটি বাসী।
নাম বদল প্রসঙ্গে নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বড়মার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজারো মানুষের আবেগ। সেই আবেগকে সম্মান দিয়ে আমরা নৈহাটি পুরসভার তরফে আমাদের বিধায়ক ও সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে বিষয়টি জানিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাবটি পাস হয়ে গিয়েছে। আমরা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তীকে তার প্রতিলিপিও পাঠিয়েছি। পরিবহন দফতর থেকে সিবুজ সংকেত মিললেই ফেরি সার্ভিসের নাম বদল করে রাখা হবে, ‘নৈহাটি বড় মা ফেরি সার্ভিস’।
ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী বড়মা অত্যন্ত জাগ্রত। সাধারণ রূপে দেবী রক্ষাকালী রূপে পরিচিত। তাঁর সেই রূপ যেন অগণিত ভক্তের কাছে আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবোচিত হয়ে উঠেছে। নৈহাটি স্টেশন থেকে পশ্চিমদিকে ঋষি অরবিন্দ রোড ধরে গঙ্গার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বড়মার শতবর্ষ ছুঁইছুঁই পুজো। যে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। বড়মার নামকরণের কারণ এই ইতিহাসই অগণিত ভক্তের কাছে জানান দেয়। বড় মা পুজোর মূলমন্ত্র: 'ধর্ম হোক যার যার, বড় মা সবার'।
কথিত আছে নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী তাঁর বন্ধুদের নিয়ে একবার নবদ্বীপে গিয়েছিলেন ভাঙা রাস দেখতে। সেখানে প্রতিমার আকার দেখে তিনি ঠিক করেছিলেন, বাড়িতে একই আকারের কালীমূর্তি নিয়ে আসবেন। আর, তার পুজো করবেন। সেইমতো চক্রবর্তী বাড়িতে সেই পুজো শুরুও হয়। কিন্তু, প্রতিবছর প্রতিমার আকৃতি বৃদ্ধির ফলে আর বাড়িতে এই পুজো করা সম্ভব হয়নি।
বড়মা মন্দির কমিটির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, “বড়মা’র মন্দির দর্শন করতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে মানুষজন আসেন। এবার বড়মার মন্দির শতবর্ষের দোড়গোড়ায়। মানুষের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ফেরি সার্ভিসের এই নাম বদলের সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।
পাশাপাশি তিনি জানান, “শতবর্ষের দোড়গোড়ায় বড়’মার মন্দিরে স্থায়ী মূর্তি গড়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ বছরভর বড়’মায়ের দর্শন করতে পারেন। তার জন্য জস্থান থেকে আনা শিল্পী আনিয়ে ‘কষ্টিপাথর’ কেটে মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মূর্তির উচ্চতা হবে সাড়ে চার ফুট। যে বেদির ওপর মূর্তিটি বসানো হবে তার উচ্চতা তিন ফুট। মাটি থেকে বড়’মার মূর্তির মোট উচ্চতা হবে সাড়ে সাতফুট। পাশাপাশি বড়মা’র মন্দিরের পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে সুবিশাল অথিতিশালাও”।
এলাকার প্রবীণদের দাবি, বড়মার প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ১৪ ফুট। যদিও এই ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। অনেকের মতে আবার বাইশ ফুটের প্রতিমা। যার নির্মাণকাজ রীতি মেনেই শুরু হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময় থেকে। শুরুতে এই কালীর নাম ভবেশ কালী থাকলেও। পরে অলৌকিক ক্ষমতার কারণে ভক্তদের কাছে বড়মা নামে পরিচিতি পায়।
তবে, আজও চক্রবর্তী বাড়িতেই তৈরি হয় প্রতিমার ভোগ। সেবকরা পুজোর খরচা বহন করেন। বছরের বাকি দিনগুলোতে পুজো চলে নৈহাটির বড়মা মন্দিরে। শ্যামাপুজোয় ভক্তদের দানের গয়নায় সেজে ওঠেন বড়মা। এলাকাবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে বিসর্জনের দিন প্রথমে বড়মার মূর্তি ভাসান দেন। তারপর অন্য সব প্রতিমার বিসর্জন হয়। ১৯৭০ সাল অবধি এলাকার শক্তিশালী যুবকরাই বড়মাকে কাঁধে করে বিসর্জন দিতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, দেবীর উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এখন সেই রীতি বদলেছে।