এতো বাড়ি নয় সাক্ষাৎ রাজপ্রাসাদ! এক ঝলক দেখলে এবাড়িকে মনে হবে রাজপ্রাসাদের সমতুল্য। তবে পেল্লায় দুটি বাড়ির মালিক কোনও রাজা-বাদশা নন। তবুও ওই রাজপ্রাসাদতুল্য বাড়ি দুটির চার সদস্যের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রয়েছে! তাঁদের মধ্যে একজন আবার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের স্ত্রী। এঁরা প্রত্যেকেই খণ্ডঘোষের কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা। এই তথ্য সামনে আসতেই তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে খণ্ডঘোষে। প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার গরিব মানুষজন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ির জন্য খণ্ডঘোষ ব্লকের একটি তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। সেই তালিকায় ৭৩১ নম্বরে রয়েছে উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের স্ত্রী সীমা শেখের নাম। এছাড়াও তালিকার ৭৩৪ ও ৫৪৩ নম্বরে রয়েছে উপপ্রধানের দুই ভাই আলমগির ও আজমগিরের নাম। এমনকী উপপ্রধানের সদ্য প্রয়াত বাবা শেখ মহসিনের নামও আছে ওই তালিকার ৭০০ নম্বরে। তালিকা দেখে শাঁকারি অঞ্চলের অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
এদিকে তালিকায় থাকা 'যোগ্য'রা যাতে বাড়ি পান তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। সেই ব্যবস্থার প্রথম ধাপে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, সিভিক ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে গঠিত দল কয়েকদিন আগে কেশবপুরে সমীক্ষা করতে যায়। তখনই উপপ্রধানের অট্টালিকা ও বিষয়-আশয় তাঁদের নজরে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ব্লক প্রশাসনে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যদিও কেশবপুরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ উপপ্রধানদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন- ডেডলাইনের ফার্স্ট ডে-তে হাজরায় সভা শুভেন্দুর, মমতার খাসতালুকে কী বোমা ফাটাবেন?
তাঁদের বক্তব্য পূর্বে উপপ্রধান ও তাঁর পরিবারের কারও আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে ২০১৮ সালে উপপ্রধান হওয়ার পর থেকে পেশায় চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গিরের আর্থিক অবস্থা পাল্টাতে শুরু করে। আর ওই বছরেই 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা'র জন্য সমীক্ষা করে প্রশাসন। তখনই উপপ্রধানের স্ত্রী-সহ চারজনের নাম উপভোক্তাদের তালিকায় তোলা হয়।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) কাজল রায় বলেন, "ত্রুটিমুক্ত তালিকাই তৈরি করা হবে। যোগ্য উপভোক্তাদের নামই তালিকায় থাকবে।'' খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন, "রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ওই সব নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।” উপপ্রধান
জাহাঙ্গির শেখের দাবি, “আগে চালাঘরে থাকতাম। তখনকার ওই অবস্থা দেখে প্রশাসনের কর্তারা সম্ভবত সরকারি অনুদানে বাড়ি পাওয়ার জন্য আমাদের পরিবারের কয়েকজনের নাম প্রকল্পের আওতাভুক্ত করেছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পরেই বিডিওকে ফোন করে নাম বাদ দিতে বলেছি।''
কিন্তু একই পরিবারের চারজনের নাম উপভোক্তা তালিকায় কী ভাবে উঠল? এই বিষয়ে উপপ্রধানের সাফাই, এটা তাঁর ধারণার বাইরে! যদিও পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি খাঁয়ের দাবি, “কি করে কি হয়েছে তার সব কিছু সবাই জানেন। এ নিয়ে দলকে যা বলার বলেছি।"
আরও পড়ুন- অভিষেককে সঙ্গে নিয়ে আজই মেঘালয়ে মমতা, বিশাল চমকে বাড়তে পারে চর্চা
এদিকে, বিজেপির খণ্ডঘোষের পর্যবেক্ষক খোকন সেন কটাক্ষ করে বলেন, "অতবড় অট্টালিকা বানানোর পরেও এক লক্ষ ২০ হাজার টাকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার তালিকায় নাম উঠেছে। তৃণমূলের নেতাদের লোভ এখন সীমা ছাড়িয়েছে"। খণ্ডঘোষের বাসিন্দা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন, ''উপপ্রধানের অট্টালিকার একটা থামের খরচ আবাস প্রকল্পের টাকার সমান। গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে সেই টাকা হাতাতেও তৃণমূল নেতারা কুন্ঠাবোধ করছেন না।''
তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লকের সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি, "সাত-আট বছর আগেকার তালিকায় থাকা উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্র এত দিনে অনুমোদন দিয়েছে। এতদিন গরিব মানুষদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। আমাদের সরকারের আমলে তখনকার তালিকায় নাম থাকাদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেটা দেখতেই এখন সমীক্ষা চলছে।'' এরজন্য আগের তালিকা পক্ষপাতদুষ্ট ছিল, এমনটা মানতে চাননি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি।