Advertisment

মালদায় নারী নির্যাতন: প্রকাশ্যে পুলিশের বড় কর্তাকে ধমক কমিশনের চেয়ারপার্সনের! দিলেন বড় হুঁশিয়ারি

প্রায় একই সময়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী সহ দুই সদস্যের প্রতিনিধি ওই দুই নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। তাঁরাও অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
National Women Commission Chairperson threatened the police DSP while meeting the victims in Malda , মালদায় নারী নির্যাতন: প্রকাশ্যে পুলিশের বড় কর্তাকে ধমক কমিশনের চেয়ারপার্সনের! দিলেন বড় হুঁশিয়ারি

নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা।

মালদায় চোর সন্দেহে বিবস্ত্র অবস্থায় দুই মহিলাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশকে ধমক দিল জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। একইভাবে এই ঘটনায় বামনগোলা থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী। দুই মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় দিল্লি থেকে মঙ্গলবার জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন রেখা শর্মা মালদায় আসেন। আর তার ঠিক কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী সহ দুই প্রতিনিধি মালদা এসে মানিকচকে দুই নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেন।

Advertisment

আদিবাসী দুই মহিলার ওপর এরকম অমানবিক অত্যাচার এবং বামনগোলা থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন রেখা শর্মা। তিনি বলেন, 'চুরির ঘটনা প্রমাণিত হলো না, অথচ ওই দুই মহিলা ছ'দিন জেল খাটলো। আর যদি ঘটনাটি ঘটেই থাকে, তাহলে এভাবে ওদের মারার অধিকার কে দিয়েছে? অর্ধনগ্ন এবং আহত অবস্থায় ওই দুই মহিলাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে থানায় বসিয়ে রাখে পুলিশ। এমনকী ওদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুড়েছে। এব্যাপারে জাতীয় মহিলা কমিশন চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই ঘটনার অভিযোগ জানানো হবে।'

এদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বন্দে-ভারত এক্সপ্রেসে মালদায় আসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। দুই মহিলা নির্যাতনের ঘটনার তদারকিতে আসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। প্রথমেই সড়কপথে ওই দুই নির্যাতিতার বাড়ি যান রেখা শর্মা। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ নির্যাতিতা দুই মহিলার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন তিনি। গত ১৮ জুলাই সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা দুই মহিলার কাছ থেকে শোনেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মালদৈ পুলিশের ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান। তাঁকে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রশ্ন করেন, 'আপনারা কি পুতুল? আপনারা তদন্ত করবেন না? ছ'দিন ধরে যখন ওই দুই মহিলা বন্দি ছিলেন তখনও আপনারা বুঝতে পারলেন না যে ভুল লোককে গ্রেফতার করেছেন? যিনি গ্রেফতার করেছিলেন তাঁকে গ্রেফতার করেছেন? ওই মহিলার জীবনে কি ছ'দিন কি ফেরত আসবে?'

জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা পুলিশের তুমুল সমালোচনা করেন। মূলত পুলিশকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তিনি। রেখা শর্মা বলেন, 'কী এমন দোষ করেছিল ওই দুই মহিলা যাঁদেরকে এইভাবে বিবস্ত্র করে পেটানো হলো? যদি চুরি করতে গিয়ে কেউ ধরা পরে, তার জন্য আইন আছে, পুলিশ আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে মারধরের ছবি ভাইরাল হয়েছে তার থেকে জঘন্য কিছু হয় না। অসংখ্য মানুষ বিবস্ত্র করে ওই দুই মহিলাকে পেটাচ্ছে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার কিছু করতে পারছে না। এই ঘটনার পর দুই মহিলাকে থানায় নিয়ে এসে ওই বিবস্ত্র অবস্থায় বসিয়ে রাখা হলো। তাদের প্রাথমিক কোনএ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো না। আবার ওই দুই নির্যাতিতা মহিলা মিথ্যা মামলায় ছ'দিনের জন্য জেলও খাটলেন। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী বামনগোলা থানার পুলিশ। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ অফিসারদের কোনওভাবেই ছাড়বো না। তাদের কঠোরতম যাতে শাস্তি হয় তার জন্য আগামিতে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দারস্থ হবো।'

অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী সহ দুই সদস্যের প্রতিনিধি ওই দুই নির্যাতিতা মহিলার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। তাঁরাও অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সুজাতা পাকরাশী লাহিড়ী বলেছেন, 'বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। আমরা ওই দুই মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের পাশে সরকার ও প্রশাসন আছে বলেও জানানো হয়েছে।'

গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার মালদায় মধ্য বয়স্ক দুই মহিলা স্থানীয় হাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই একটি মিষ্টির দোকানে টাকা চুরির অভিযোগে ওই দুই মহিলাকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে গণপিটুনি দেওয়া হয়। বিষয়টি কয়েকদিনের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আর তারপর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন ঘটনার তদন্ত চালিয়ে বামনগোলা থানার আইসি জয়দীপ চক্রবর্তী , পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ির ওসি রাকেশ বিশ্বাস সহ চারজন পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় তিন মহিলা সহ দু'জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে ভুল স্বীকার করে নেয় পুলিশ।

Malda Maldah National Womens Commission
Advertisment