শেষপর্যন্ত বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর দৌহিত্র চন্দ্র বসু। মেরুকরণভিত্তিক ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি এবং বিভাজনের নীতির দরুন দলের সঙ্গে তাঁর পথ চলা আর সম্ভব হচ্ছিল না বলে জানিয়েছেন নেতাজি পরিবারের এই সদস্য। একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়লেও বিগত দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কই লক্ষ্য করা গিয়েছে তাঁর। এবার তাহলে কোন দলে নাম লেখাচ্ছেন তিনি? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে চন্দ্র বসু জানিয়েছেন তাঁর এবং দলের মতাদর্শ এক হলে তিনি যেকোনও দলে যোগ দিতে প্রস্তুত। চন্দ্র বসুর কথায়, 'কীভাবে কাজ করা উচিত, তা নিয়ে আমি দলকে অনেক প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দল তা গ্রহণ করেনি। বিজেপি বাংলায় ভুল পথে এগোচ্ছে। মেরুকরণ, বিভাজনভিত্তিক ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি বিজেপির সম্ভাবনা শেষ করছে।'
২০১৬ সালে হাওড়ায় একটি সমাবেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র উপস্থিতিতে চন্দ্র বসু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে ২০১৬-য় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি করা হয়েছিল। পরে ২০২০ সালে দলের প্রদেশ শাখার সাংগঠনিক রদবদলের সময় চন্দ্র বসুকে কোনও পদই দেওয়া হয়নি।পদ্ম প্রতীকে তিনি দু'বার নির্বাচনী লড়াইতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন। নেতাজি দৌহিত্র চন্দ্র বসু ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেনেছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা থেকে প্রতিন্দ্বিতা করেছিলেন।
নেতাজির আদর্শের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য বিজেপির, তাহলে কেন বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন চন্দর বসু? তাঁর দাবি, 'আমি যখন বিজেপিতে যোগদান করি, তখন আমাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শরৎচন্দ্র বসুর আদর্শ প্রচার করতে দেওয়া হবে। কিন্তু গত ৯ বছরে সেরকম কিছুই হয়নি।'
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে, চন্দ্র বসু লিখেছেন, 'মোদিজির নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়েই ২০১৬ সালে বিজেপি-তে যোগদান করেছিলাম। তখন তো বটেই, এমনকি এখনও আমি চেয়েছিলাম বিজেপির মাধ্যমে শরৎচন্দ্র বসু ও সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক৷ তখন ঠিক হয়েছিল বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই আজাদ হিন্দ মোর্চা তৈরি হবে, যার মাধ্যমে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতীয়ের মধ্যে নেতাজির আদর্শ প্রচার করা হবে৷ কিন্তু প্রচারমূলক এই প্রচেষ্টায় কেন্দ্রে বা পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিজেপির কাছ থেকে কোনও সমর্থন পায়নি। আমি রাজ্যের জনগণের কাছে বিজেপিকে পৌঁছে দিতে বেঙ্গল মডেলের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমার প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে।'
রাজনীতি ছাড়ছেন নেতাজির নাতি? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে চন্দ্র বসু বলেছেন, 'আমি রাজনীতি ছাড়ছি না। আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। এখন পর্যন্ত কেউ কিছু দেয়নি। আমার রাজনীতি নেতাজি এবং শরৎচন্দ্র বসুর মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে। আমার মতাদর্শ যদি অন্য কোনও দলের আদর্শের সঙ্গে মিলে যায়, আমি অবশ্যই সেই দলে যোগ দেওয়ার কথা ভাবব।'
একাধিক ইস্যুতে চন্দ্র বসু পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র সমালোচনা করেছেন। ২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনেরও বিরোধিতা করেছিলেন।
চন্দ্র বসুর ইস্তফা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'আমরা চন্দ্র বোস নিয়ে নয়, চন্দ্রযান নিয়ে কথা বলছি। দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। তিনি মোটেও সক্রিয় ছিলেন না। অতএব, তিনি দল ছাড়ছেন তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।'