মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে কুরুচিকর 'থিম', তীব্র নিন্দা নেটিজেনদের

সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, যা মানসিক ভারসাম্যহীনদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননাকর। এই ভিডিওটি ভাইরাল হতে শুরু করতেই নিন্দায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা।

সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, যা মানসিক ভারসাম্যহীনদের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননাকর। এই ভিডিওটি ভাইরাল হতে শুরু করতেই নিন্দায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Netizens strongly criticize insensitive content on mental illness promoted by a social media page

প্রতীকী ছবি: সৌজন্যে পিক্সাবে।

একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজের বিতর্কিত ভিডিওতে মানসিক ভারসাম্যহীনদের কুরুচিকর উপস্থাপনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। নেটিজেনদের বেশিরভাগই ওই ভিডিওটিকে অমানবিক বলে নিন্দা করেছেন। ভিডিওটি একটি পুজোর থিমের রেকর্ডিং, যেখানে তৈরি করা হয়েছে একটি মানসিক হাসপাতাল, এবং সেখানে বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্তদের ভূমিকায় অভিনয় করছেন একদল মানুষ। ফেসবুকে একটি বিশেষ পেজ ভিডিওটি আপলোড করার পরে তা নেটিজেনদের নজরে আসে, এবং এই ধরনের একটি উপস্থাপনা যে কতটা নিন্দনীয় সেই বিষয়ে সরব হন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকরা।

Advertisment

ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে ২৮ অক্টোবর। ৩০ অক্টোবর থেকেই বিভিন্ন ইউজার ওই পোস্টটি শেয়ার করেন তাঁদের টাইমলাইনে এবং এই ধরনের উপস্থাপনা যে কতটা বিকৃতি ও কুরুচির পরিচয়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। ওই ভিডিওটি দেখে বোঝা যায় যে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে একটি মানসিক হাসপাতালের সেট, যেখানে বিভিন্ন সেলে আটক নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষ। মানসিক রোগীদের নানা ধরনের সম্ভাব্য আচরণও নকল করতে দেখা যায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। যে পেজ থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়, সেই পেজের পোস্ট কপিতে লেখা ছিল - 'এই ভিডিওটি হল কালীপুজোর সেরা থিম'। ওই লেখার সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি হাস্যরসাত্মক ইমোজি। তবে যে পুজো বা ক্লাব থেকে এই ধরনের থিমের উপস্থাপনা করা হয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত না অন্য কোনও রাজ্যে তা এখনও জানা যায়নি।

Video posted by a FB page প্রথমে এমন হাস্যরসাত্মক পোস্ট কপি লিখেই আপলোড করা হয়েছিল ভিডিওটি।

আরও পড়ুন: নিজের পরিবারেই আপনার সন্তান লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না তো? 

Advertisment

যে ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করা হয়েছে, সেখানে কোনও ক্লাবের নাম দেখা যায়নি। তবে ভি়ডিওতে দেখা গিয়েছে যে বহু মানুষ ওই থিম দেখতে এসেছেন এবং দর্শকের ভিড়ে শিশুরাও রয়েছে। নেটিজেনদের বিভিন্ন কমেন্ট থেকেই উঠে আসছে যে এই থিমটি সম্ভবত নদীয়ার ধুবুলিয়া অঞ্চলের কোনও ক্লাবের পুজোয় দেখা গিয়েছিল। তবে সেটা কোন ক্লাব বা কোন বছর এই ধরনের থিমের উপস্থাপনা ছিল তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। এই ধরনের থিম যে অত্যন্ত অমানবিক সেই নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই।

Social Media criticism against mental hospital theme video নেটিজেনদের সমালোচনা

Social Media criticism against mental hospital theme video নেটিজেনদের সমালোচনা

এই ভিডিওটির যেমন নিন্দা করেছেন সবাই, পাশাপাশি নেটিজেনদের অনেকেই সরব হয়েছেন ওই ফেসবুক পেজটির বিরুদ্ধে, যেখান থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। ঘটনাচক্রে ওই পেজের নামাঙ্কনে রয়েছে একটি বিশেষ পারফরমিং আর্টস ইনস্টিটিউটের নাম, যার প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্ণধার বাংলা বিনোদন জগতের একজন সুপরিচিত অভিনেতা।

FB page that uploaded disputed content এসএমপিএআই ফোটোগ্রাফি নামক এই পেজের সঙ্গে তাঁর সংস্থার সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সম্রাট মুখোপাধ্যায়

'এসএমপিএআই ফোটোগ্রাফি' নামক যে পেজটি থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে, সেখানে অভিনেতা সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রশিক্ষণ সংস্থা 'এসএমপিএআই'-এর নামাঙ্কন রয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই পেজে তাঁর ছবি এবং 'এসএমপিএআই'-এর হেড অফিসের ঠিকানাও রয়েছে। এমন একটি কুরুচিকর ভিডিও কীভাবে তাঁর ইনস্টিটিউটের পেজ থেকে শেয়ার করা হলো, এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে যখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, সম্রাট জানান যে 'এসএমপিএআই ফোটোগ্রাফি' পেজটির সঙ্গে তাঁর সংস্থার কোনও যোগাযোগই নেই। একই কথা জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং এসএমপিএআই-এর ডিরেক্টর, অভিনেত্রী ময়না মুখোপাধ্যায়। এই বিষয়ে সোশাল মিডিয়াতে একটি ঘোষণাও করেছেন অভিনেতা।

Samrat Mukherjee Declaration সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় হলফনামা

সম্রাট ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ''ওই পেজটির সঙ্গে আমাদের সংস্থার কোনও সম্পর্ক নেই। ওটা একটা ফেক পেজ। আমাদের সংস্থার নিজস্ব অফিশিয়াল পেজ রয়েছে এবং সেখানে আমরা শুধুমাত্র আমাদের ইনস্টিটিউটে শুট করা ও এডিট করা ভিডিও পোস্ট করি। বাইরের কোনও কনটেন্ট আমাদের পেজে শেয়ার করা হয় না। তাছাড়া এসএমপিএআই-এর কোনও ফোটোগ্রাফি বিভাগ নেই। আমরা গান, নাচ, মিডিয়া সায়েন্স-অ্যাঙ্করিং এবং অভিনয় - এই চারটি বিষয়ে কোর্স করে থাকি। এর বাইরে আর কোনও কিছু শেখানো হয় না এসএমপিএআই-এর হেড অফিস বা ব্রাঞ্চগুলিতে। এর আগেও আমাদের সংস্থার নাম করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ খুলে কিছু মানুষ অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করেছেন...''

SMPAI official FB page এসএমপিএআই-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। ছবি সৌজন্য: সম্রাট মুখোপাধ্যায়

"...কখনও অডিশনের নাম করে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কখনও মেয়েদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবি চাওয়া হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে পুলিশের সাইবার সেলে জানিয়েছি একাধিকবার। যখনই এমন কোনও পেজ বা এমন কোনও ঘটনা আমাদের চোখে পড়েছে, তখনই আমরা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছি। এই পেজটির বিরুদ্ধেও আমরা রিপোর্ট করব। আমরা এই বিষয়ে ফেসবুকের ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলব। আর যে ভিডিওটি ওই পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে, সেখানে মানসিক রোগীদের যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা সত্যিই খুবই নিন্দার বিষয়।''

মানসিক রোগী, মানসিক হাসপাতালের থিমের এই উপস্থাপনা এই প্রথম নয় বলেই জানা গিয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন কমেন্টে নেটিজেনরা এই প্রসঙ্গে লিখেছেন যে এই বিশেষ থিমটি পশ্চিমবঙ্গের একাধিক অঞ্চলে, একাধিক ক্লাবের পুজোতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এখনও পর্যন্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে এই তথ্যের সত্যতা সম্পূর্ণভাবে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি তবে মানসিক রোগগ্রস্তদের এই অবমাননাকর উপস্থাপনা, যেভাবেই হোক না কেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ৩০ অক্টোবর সোশাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনার পরে, যে পেজ থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়, হঠাৎই সেই পেজের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যায়। প্রতিবেদনের প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে এই ভিডিওর সঙ্গে লেখা প্রথম পোস্ট কপিটি ছিল একটি হাস্যরসাত্মক মন্তব্য। উপরে তার স্ক্রিনশটও রয়েছে।

The alleged FB page changed the post copy নেটিজেনদের চাপে পড়ে বদলে গেল ভিডিও সম্পর্কে পেজের দৃষ্টিভঙ্গি। হাস্যরস থেকে একলাফে সচেতনতার বাণী, তাও মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই।

কয়েক ঘন্টা পরে, ওই বিশেষ পোস্টে নেটিজেনদের তুমুল সমালোচনার কারণেই সম্ভবত পোস্ট কপিটি আমূল বদলে লেখা হয় - 'ধুবলিয়ার একটি পূজা মণ্ডপ! যেখানে পূজার থিম মানসিক হাসপাতাল! এটা একটা পুজোর থিম! উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে আগে শিক্ষিত হওয়া দরকার। এই বোধবুদ্ধি নিয়ে সামাজিক উৎসব পালন করা উচিত নয়।'

ওই পেজটির পরিচালনা কে বা কারা করছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে পেজ অ্যাডমিন যে চাপের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি পোস্ট কপিটি বদলেছেন তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

Social Media