মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পর্ষদের তরফ থেকে করা নিরাপত্তার কথা ঘোষণা করা হলেও টানা ৭ দিনই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বেনজির ঘটনাটি ঘটেছে এ বছর। স্বভাবতই নিরাপত্তা আরও বাড়াতে পরীক্ষা শুরুর সাতদিন আগে নতুন নিয়মের কথা জানিয়ে দিল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনো বাধ্যতামূলক করল সংসদ। মঙ্গলবার থেকেই রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই সংসদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, এ বছর থেকে প্রতি কেন্দ্রে থাকছে স্ক্যানার। কেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনও গ্যাজেট থাকছে কি না, তাই যাচাই করার জন্য এই ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হল, সকাল ৯ টার মধ্যে প্রতিটি পরীক্ষার্থীর কেন্দ্রে পৌঁছনো বাধ্যতামূলক।
সাংবাদিক বৈঠকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি জানান, ‘‘ক্লাসরুমে কোনও পরীক্ষার্থীর থেকে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। পরীক্ষা তো বাতিল করা হবেই। তবে এবার আমরা এ নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি অপরাধের গুরুত্ব বুঝে পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করা হবে। অর্থাৎ ওই পরীক্ষার্থী সংসদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আর কোনওদিন বসতে পারবে না।’’
আরও পড়ুন, খোকা ৪২০-এর বদান্যতা ফুরোবে কবে?
এই বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আট লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী রয়েছে। এবছর ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রদের তুলনায় প্রায় ৬৫,০০০ বেশি বলে জানান ওই কর্মকর্তা। “প্রায় ৮.০৫ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে এবার, পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ১৩ মার্চ। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ঠেকাতে আরও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে সংসদ। মহুয়াদেবী জানান, ‘‘ভেন্যু সুপারভাইজার অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক, সেন্টার ইন চার্জ, সেন্টার সেক্রেটারি ছাড়া আর কারও কাছে মোবাইল ফোন রাখা যাবে না। এটা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য কড়া নিরাপত্তা বলয় রাখা হয়েছে। প্রায় এক চতুর্থাংশ পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ডিটেকশন সেন্টার থাকছে।’’
অন্যদিকে, পরীক্ষা শুরুর প্রথম ঘণ্টায় কোনও পরীক্ষার্থীকেই শৌচাগারে যেতে দেওয়া হবে না বলেও এদিন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে জানানো হয়েছে। এমনকি, প্রথম ঘণ্টায় কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীও পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে যেতে পারবেন না।
মহুয়াদেবী আরও জানান, ‘‘প্রতিটি পরীক্ষাকন্দ্রে ভেন্যু সুপারভাইজারকে আলাদা আই কার্ড দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের সুরক্ষার দায়িত্ব ওঁর উপরই থাকছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে তাঁর ঘরের গুরুত্ব বোঝাতে কন্ট্রোল রুম পোস্টার দেওয়া থাকবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে তিনজন পরিদর্শক থাকছেন। প্রশ্নপত্রের খামে কম্পিউটার ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকছে। নিয়ম পালন করা হচ্ছে কিনা, তার নজরদারি চালানো হবে। কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।’’
ভেন্যু সুপারভাইজারদের পাঠানো ৫টি নির্দেশিকা প্রসঙ্গে এদিন সংসদ সভাপতি জানান, ‘‘কারও কাছে মোবাইল থাকলে, কেউ টুকলি করলে, পরিদর্শক বা শিক্ষককে নিগ্রহ করা হলে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে, খাতার কোনও অংশ জমা না দিয়ে বাড়ি নিয়ে চলে গেলে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হতে পারে।’’