তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (এআরআই) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ। একের পর এক শিশুমৃত্যু…! রাজ্যজুড়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা। অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় ইতিমধ্যে জেলার প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল সহ মহকুমা হাসপাতালগুলিতেও বিশেষ বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও রোখা যাচ্ছে না সংক্রমণ-মৃত্যু।
গত ১০ দিনে কেবল বিসি রায় শিশু হাসপাতালেই ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার শিশুদের অ্যাডিনো উপসর্গ শনাক্ত করতে সেই সঙ্গে অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণের দাপট রুখতে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ বাংলা জুড়ে ঘরে ঘরে সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনো উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি শিশু। কোভিডের পর ফের বাংলা জুড়ে নয়া ত্রাস অ্যাডিনো ভাইরাস। সেই সঙ্গে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি! H3N2 ভাইরাসের দাপট, ইতিমধ্যেই পরামর্শ জারি করেছে কেন্দ্র।
সূত্রের খবর, কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের বিভিন্ন তরঙ্গের সময় অনুরূপ সমীক্ষা চালু করা হয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এবং এই নজরদারি বেশ কাজেও আসে। অ্যাডিনো মোকাবিলায় সেই পথেই এগোতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। বাংলায় প্রায় ৫৪ হাজার আশা কর্মী রয়েছেন, যারা কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে সেই সমীক্ষা পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “আশা কর্মীরা তাদের সমীক্ষার একটি রিপোর্ট তৈরি করবে এবং তাদের সুপারভাইজারদের কাছে সেটি জমা দেবে। যারা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সেই ডেটা পাঠাবে। আশা কর্মীরা অসুস্থ শিশুদের কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সাহায্য করবে। তাদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার বিষয়েও সচেতন করবে,”।
কোভিডের পরে, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন শিশুদের মৃত্যুর এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। অ্যাডেনোভাইরাসে মাত্রাচাড়া সংক্রমণ রাজ্য সরকারের উদ্বেগের একটা প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা ছাড়াও জেলাগুলি থেকেও অ্যাডিনো উপসর্গ নিয়ে শিশুভর্তির রিপোর্ট সামনে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২রা রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন এবং 'সংক্রমণের বিস্তার' নিয়ে আতঙ্ক না ছড়ানোর আবেদন করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে সমস্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে আশা কর্মীদের সমীক্ষার জন্য একটি ফরম্যাট পাঠিয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই সমীক্ষা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে।
একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, 'ব্লক-স্তরের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা আশা কর্মীদের সংগ্রহ করা ডেটা সংগ্রহ করে জেলায় পাঠাবেন। মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিকের কার্যালয় থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে দৈনিক রিপোর্ট পাঠাবে'। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলেছেন এই সমীক্ষা তাদের একটি নির্দিষ্ট ব্লক বা জেলায় কত শিশু অ্যাডিনো উপসর্গে আক্রান্ত সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পেতে সাহায্য করবে। প্রত্যন্ত জেলা থেকে শিশুদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা আতঙ্ককে সঙ্গী করে মধ্যে কলকাতার হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন।
অনেক ক্ষেত্রে জেলাস্তরেই সেই চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব বলেই দাবি করেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। শিশুদের মধ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিশেষ হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। হেল্পলাইন নম্বরটি হল ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২। ২৪ ঘণ্টার জন্য এই হেল্পলাইন খোলা থাকবে এবং অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনও প্রয়োজনে এই নম্বরে ফোন করে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া যাবে।
এসবের পরও ১০ দিনে রাজ্যে ৪৩টি শিশু মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে! সোমবার সকালেও মৃত্যু দুই শিশুর। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ফের এক শিশুর মৃত্যু হয় কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। মৃত বয়স ৮ মাস। গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসছে। বেসরকারি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাডিনো ভাইরাস উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ শিশু'র। আক্রান্তের সংখ্যা ৫হাজার ২১৩ জন। সব মিলিয়ে রাজ্য জুড়ে অ্যাডিনো আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে।