নিউটাউনের আইনজীবীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় মৃতের স্ত্রী-কে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার গভীর রাতে নিজেদের হেফাজতে নেয় অনিন্দিতা পালকে। রবিবার তাঁকে বারাসাত আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ধৃতকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রজতকে খুন করা হয়েছে মোবাইল চার্জারের তার গলায় পেঁচিয়ে, শ্বাসরোধ করে। খুনে অনিন্দিতা যেমন ছিল, তেমনই পুলিশের সন্দেহ একা অনিন্দিতার পক্ষে এই খুন করে ওঠা সম্ভব নয়। ঘটনায় অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে দৃঢ় সন্দেহ পুলিশের।
আরও পড়ুন, রক্ষকই ভক্ষক! মূক ও বধির কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হাওড়ার হোমের তিন কর্মী
পুলিশের অনুমান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। রজত মারা যাওয়ার পরেই ধৃত অনিন্দিতা তাঁর মোবাইলের সব চ্যাট ডিলিট করে দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়াও সোশাল সাইটে অনিন্দিতার প্রোফাইল থেকেও উধাও বহু তথ্য। তাঁর মোবাইল এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে।
গত ২৬ নভেম্বর নিউটাউনের বিবি ব্লকের একটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় হাইকোর্টের আইনজীবী রজত দের দেহ। নিউটাউন থানায় প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, আইনজীবীর স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে প্রথমে জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন তিনি স্বামীকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। গায়ে হাত দিয়ে ডাকার পর পড়ে যান রজত। পরে বয়ান বদলে তিনি বলেন, বিছানার চাদর গলায় জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন রজত। অনিন্দিতা একাধিকবার বয়ান বদল করায় ধন্ধে পড়েন তদন্তকারীরা। এরই মাঝে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় মামলার মোড়। মৃতের গলায় সরু (০.৫ সেন্টিমিটার) দাগ পাওয়া গিয়েছে বলে জানা যায় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক টিম, নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়। এর পরই রজত দে মৃত্যুু রহস্যে ররহস্যের কিনারা করতে আসরে নামেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিং স্বয়ং। শনিবার অনিন্দিতাকে থানায় ডেকে জেরা করা হয়। শেষ পর্যন্ত জেরার মাঝেই ভেঙে পড়েন অনিন্দিতা।
পুলিশ জানিয়েছে, রজত দে কে খুনের আগে শিশুপুত্র এবং বাড়ির পোষ্য কুকুরকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অনিন্দিতা। রজতের মৃত্যুর পরেও অনিন্দিতা থানায় খবর দেননি বা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা করেননি। বরাহনগর থেকে রজতের বাবা সমীর দে-খবর পেয়ে বরানগর থেকে নিউ টাউনে আসার পর পুলিশে খবর দেন। তিনি শুরু থেকেই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, আদিবাসী মহিলাকে গণধর্ষণ এক মাস ধরে, পুলিশের খপ্পরে ৪ অভিযুক্ত
এই খুনের পিছনে রয়েছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, এমনটাই মনে করছে পুলিশ। অনিন্দিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এক চিকিৎসক ও এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তের গতিপ্রকৃতি অবহিত করতে রবিবার বারাসাত আদালতে হাজির ছিলেন খোদ জ্ঞানবন্ত সিং। বিচারক দু পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর অনিন্দিতাকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। আপাতত নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর অনিন্দিতার অপরাধ সঙ্গীর হদিশ নিতে চাইবে পুলিশ। পেশায় আইনজীবী অনিন্দিতার বিরুদ্ধে খুন ছাড়াও ষড়যন্ত্র ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।