নিউটাউনে মেধাবী পড়ুয়ার রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘিরে চাঞ্চল্য। বন্ধুদের হাতেই যুবককে খুন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। নিউটাউনের তারুলিয়ার একটি বাড়ি থেকে সুটকেসবন্দি অবস্থায় উদ্ধার পড়ুয়ার দেহ। হাড়হিম এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সঙ্গে থাকা দামী ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট ও হাইফাই লাইফস্টাইলের জন্যই অন্যদের কাছে ইর্ষার কারণ ছিলেন ওই পড়ুয়া। তারই জেরে তাঁকে অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ চেয়ে বাড়িতে ফোনও করে অভিযুক্ত।
নিহত মেধাবী ওই পড়ুয়ার নাম সাজিদ হোসেন। সাজিদ মালদহের কালিয়াচকের ষোলো মাইল এলাকার বাসিন্দা। নিট পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিউটাউনের একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সাজিদ। মাস ছয়েক আগে মালদহ থকে কলকাতায় এসেছিলেন ওই যুবক। মহিষবাথানে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন ওই যুবক। কালিয়াচকের একটি সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান সাজিদ। তাঁর কাছে একাধিক দামী ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট ছিল। তাঁর চালচলনও ছিল বেশ হাইফাই। এসব দেখে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বও বাড়িয়েছিল স্থানীয়দের কয়েকজন।
মহিষবাথানের যে ফ্ল্যাটে সাজিদ ভাড়া ছিলেন, তার নীচের তলাতেই ছিল একটি ফাস্ট ফুডের দোকান। ওই দোকানের মালিক গৌতম সিংয়ের সঙ্গে সাজিদের ভালোই আলাপ জমেছিল। গৌতম বেশ কয়েকমাস ধরেই সাজিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়েছিল। সাজিদের কাছে সব সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা থাকতো। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায়শই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হতো। এসব তথ্য তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জেনে নিয়েছিল গৌতম সিং। পুলিশের ধারণা, সাজিদের লাইফ স্টাইলই অন্যদের কাছে তাঁকে ইর্ষার পাত্র করে তুলেছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সাজিদের ফোনে তাঁর বাবার পাঠানো মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন কোনওভাবে দেখতে পায় গৌতম। পরে সাজিদকে ওই টাকা তাকে দিতে চাপ দেয় সে। সাজিদ রাজি না হলে তাঁকে মদ খাইয়ে অপরহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- পিসির স্মৃতি উসকে দিলেন ভাইপো! রাজভবনের সামনে রাতভর ধর্নায় অভিষেক
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ অক্টোবর সাজিদের বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করে তাঁর ছেলেকে অপহরণ কার হয়েছে বলে জানানো হয়। মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় সাজিদকে খুনের হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। এরপরেই সাজিদের বাবা নিউটাউন থানার পুলিশকে গোটা ঘটনা জানান। তড়িঘড়ি এলাকায় তল্লাশি অভিযানে নামে পুলিশও।
আরও পড়ুন- ব্রাহ্মণের মন্ত্রে নয়, এগাঁয়ে অনন্য এই রীতিতেই চলে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো
রাতভর এলাকায় চলে পুলিশি তল্লাশি। বিভিন্ন সূত্র মারফত খবর নিয়ে গৌতম সিংয়ের হদিশ পায় পুলিশ। নিউটাউনের তারুলিয়ায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকতো গৌতম। পুলিশ গৌতমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ঘাবড়ে যায় সে। অভিযোগ, তারপরেই সে সাজিদকে খুন করে দেহ একটি স্যুটকেসে ঢুকিয়ে দেয়। সেই সুটকেসটি খাটের নীচে ঢুকিয়ে রাখে গৌতম। বৃহস্পতিবার সেই ঘর থেকেই সাজিদ হোসেন নামে ওই মেধাবী ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে গৌতম সিং সহ আরও ৪ জনকে।