কেউ বলছেন পুড়িয়ে খুন, কেউ বলছেন কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে মেরে পেট্রোল ঢেলে আগুন। নৃশংস হত্যালীলা চলেছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে। রোষের আগুনে ঝলসে গিয়েছে আটটি প্রাণ। দেহগুলি পুড়ে এমনই হয়ে যায়, যে চেনারও উপায় ছিল না। ঘটনা শুনলে গা শিউরে উঠতে বাধ্য যে কারও। এবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের নৃশংস সেই গণহত্যা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মানাবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে কমিশন।
জানা গিয়েছে, শীঘ্রই রামপুরহাটে যাবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলবেন। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গেও কথা হবে কমিশনের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের নৃশংস গণহত্যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। এক তৃণমূল নেতার খুনের পরেই গ্রামের একের পর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় আরও সাত জনকে। নক্কারজনক এই ঘটনার নিন্দায় সরব সব পক্ষ। আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বগটুইয়ের ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্যের কাছে। সেই রিপোর্ট হাতে পেলে এরাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর ব্যাপারেও চিন্তা-ভানা শুরু করতে পারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ইতিমধ্যেই বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ, পুলিশের জালে তৃণমূল নেতা আনারুল
কলকাতা হাইকোর্টও রামপুরহাচের জাতীয় সড়ক লাগোয়া এই গ্রামের ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা গ্রহণ করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে বগটুই গ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত-সহ পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলির চতুর্দিক সিসি ক্যামেরায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ছোট-বড় পদের মোট ১৫ পুলিশকর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার।
বগটুই গ্রামে গিয়ে এদিন নৃশংস এই গণহত্যা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''ভয়াবহ ঘটনা। আমি ভাবতে পারিনি এরকম নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে কখনও। কয়েকটা লোকের জন্য অশান্তির আগুন।" বৃহস্পতিবারই বগটুই গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন, বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার। আগুন পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলির মেরামতের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও হিংসার জেরে জখমদের ৫০ হাজার টাকা সাহায্য মিলবে। নিহতদের পরিবারের একজনকে তাঁর কোটা থেকে চাকরি দেওয়ার কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।