বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে জাতীয় মানবাধ্কার কমিশনের রিপোর্ট আগেই খারিজ করেছিল রাজ্য সরকার। এবার কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করল রাজ্য। কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির যোগ রয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে নবান্ন। ভোটের পরে রাজ্যের হিংসা নিয়ে কমিশনের রিপোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য সরকার। কমিশনের সদস্য নিয়োগের নেপথ্যে 'রাজনৈতির উদ্দেশ্য' রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কমিশনের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। হলফনামায় উল্লেখ, কমিশনের সদস্য রাজীব জৈন একসময় বিজেপি-র আইটি সেলের দায়িত্বভার সামলেছেন। আতিফ রশিদ এবিভিপি-র প্রাক্তন নেতা। বিজেপির হয়ে ভোটেও লড়েছেন তিনি। আন্যজন হলেন, রাজুবেন এল দেশাই। কমিশনের এই সদস্য বিজেপি যুব মোর্চার জাতীয় কর্মকর্তা। তিনি বিজেপি-র একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাই কোর্টে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল। একে 'অতিসক্রিয়তা' বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার। নবান্নের যুক্তি, কমিশনকে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখে শুধুমাত্র রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল হাই কোর্ট। কিন্তু কমিশন সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে। মামলা রাজ্যের বাইরে অন্যত্র সরানোরও কথা বলেছে। সম্পূর্ণ বিষয়টিই পূর্বপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি রাজ্যের।
রাজ্যে ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে হলফনামা দিল রাজ্য়। সেই হলফনামায় বিস্ফোরক অভিযোগ করল সরকার। কমিটির সদস্যদের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অভিযোগ করল। কীভাবে ওই রিপোর্ট নিরপেক্ষ হতে পারে? তা নিয়ে হলফনামায় প্রশ্ন তুলল রাজ্য়।
২রা মে ভোটের ফলপ্রকাশের পরই রাজনৈতিক হিংসায় উত্তাল হয় বাংলা। বিজেপি সহ বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দল তৃণমূলের নৃকেরমী, সমর্থকরা তাদের দলের কর্মী, সমর্থকদের উফর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে। অনেকেই বাড়িছাড়া। পুলিশও নিষ্ক্রিয়। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন রাজ্যপালও। ৫ই মে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের দায়িত্বভার নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হিংসায় মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু হিংসা কমেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এরপরই অত্যাচারিতরা আদালতে দ্বারস্থ হয়। হাই কোর্ট প্রথমে একটি কমিটি গঠন করে ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর নির্দেশ দিলেও তা হয়নি। ফের হাই কোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে ঘরছাড়াদের ঘরে ফারাতে নির্দেশ দেয়।
হাই কোর্টে জমা করা সেই কমিটির রিপোর্টে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রীকে 'কুখ্যাত দুষ্কৃতী' বলে দেগে দেওয়া হয়। এইসব ঘটনার সত্য উদঘাটনে সিবিআই তদন্ত ও রাজ্যের বাইরে মামলার শুনানির সুপারিশ করে কমিশন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই কমিশনের রিপোর্টের প্রতিবাদ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ৫ই মে তিনি রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছেন। হিংসার ঘটনা ঘটেছে তার আগে। সেই সময় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। ফলে হিংসার দায়ে কমিশনের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন