বাড়ির উঠোনেই রয়েছে প্রাচীন বেলগাছ। বাড়ির প্রবীণতম সদস্যও জানেন না, সেই গাছের বয়স কত। দীর্ঘদিন ধরেই দেবতা মেনে পুজো করা হয় সেই গাছকে। গাছের গোড়ায় গড়ে উঠেছে মন্দিরও। বাড়ির শতাব্দীপ্রাচীন দুর্গাপুজোর বোধন হয় সেই বেলগাছেই। জয়নগরের উত্তরপাড়ার সরকারবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই রীতি।
এই বাড়ির কুলোপুরোহিত জানান, শাস্ত্রে বেলগাছে দেবী দুর্গার বোধনের উল্লেখ রয়েছে। সেই নিয়মই পালন করা হয় এখানে। বহু বছর আগে হুগলি থেকে জয়নগরে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন সরকাররা। ১৩০৭ বঙ্গাব্দ নাগাদ এখানেই পুজোর সূচনা করেন পেশায় শিক্ষক গোপালচন্দ্র সরকার। সেই থেকে পুজো চলছে।
বর্তমানে গোপালচন্দ্রের নাতি-নাতনি ও তাঁদের ছেলে-মেয়েরা মিলে পুজোর আয়োজন করেন। পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছেন কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকায়। পুজোর ক’দিন এক জায়গায় আসেন সবাই। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন মিলে গমগম করে সরকার বাড়ি। অষ্টমী-নবমীতে ভোগ বিতরণ হয়। সরকার বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে চিকিৎসক নীলরতন সরকার, শিশু সাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকারের নাম।
সরকারবাড়ির ঠাকুর দালান।
পরিবার সূত্রের খবর, জয়নগরের সরকারবাড়ি নীলরতন, যোগীন্দ্রনাথদের মামার বাড়ি। কৈশোরে অনেকটা সময় তাঁরা এই বাড়িতে কাটিয়েছেন। পরেও এখানে এসেছেন নীলরতন। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে সরকারদের। পরিবারের সদস্যদের দাবি, চন্দ্রিমার শ্বশুরবাড়ি এখানেই। একাধিকবার এই বাড়িতে এসেছেন তিনি। জয়নগরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এসেও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ঘুরে গিয়েছেন সরকারবাড়ি থেকে।
আরও পড়ুন- ঘনাচ্ছে নিম্নচাপ! পুজোর মধ্যেই ওয়েদারে তুমুল চেঞ্জ! ঝেঁপে বৃষ্টির সম্ভাবনা কোন কোন জেলায়?
দুর্গাপুজোর পাশাপাশি সরকারবাড়িতে নিত্য পুজো হয় বাসুদেব জিউর। বহু বছর আগে সরকারবাড়ির পাশে একটি পুকুর খনন করতে গিয়ে কষ্টিপাথরের বাসুদেব মূর্তি মেলে। ইংরেজদের হাত থেকে সেই মূর্তি বাঁচিয়ে বাড়িতে পুজো শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। সেই থেকে রোজ বাসুদেবের পুজো হয়ে আসছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাসুদেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠার কিছু আগে-পরেই দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন- মেট্রোয় হোক দুগ্গা দর্শন, পঞ্চমী-ষষ্ঠীতে রাতের শেষ মেট্রো ক’টায়?
বর্তমানে রাস এবং দুর্গাপুজো দু’টোই ধুমধাম করে হয়। গোপালচন্দ্রের নাতি প্রবীণ শৈলেন সরকার বলেন, “আড়ম্বর কিছুটা কমেছে। তবে পুজো ঘিরে উন্মাদনা একই আছে। পরিবারের সদস্যরা এই ক’দিন সবাই এক জায়গায় হন। চেষ্টা করছি নিয়ম-নীতি মেনে পুজো চালিয়ে যাওয়ার।”
আরও পড়ুন- সপ্তমী to দশমী, শিয়ালদহ-সল্টলেক সেক্টর ফাইভ রুটেও তাকলাগানো পরিষেবা মেট্রোর