পানের স্বাদ তেঁতো, আমফান-ত্রাণ না মেলায় ফুঁসছে দক্ষিণবঙ্গ

আমফান ত্রাণ বন্টনকে কেন্দ্র করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির আঁচ

আমফান ত্রাণ বন্টনকে কেন্দ্র করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির আঁচ

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দুশ্চিন্তায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষীরা

আমফান ত্রাণ বন্টনকে কেন্দ্র করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির আঁচ মিলছে। এর আগে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ক্ষমতাধর পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েতের সদস্য বা শাসকদলের ঘনিষ্ঠের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোর বিষয়টি। সেখানে দেখা গিয়েছে, ভয়ঙ্কর ঝড়ে বাড়ির ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও মিলেছে ক্ষতিপূরণের টাকা। এমনকী ত্রাণ নেওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তিও সরকারি নথিতে ‘জীবিত’ হয়ে উঠেছেন। এই দুর্নীতির ছবি পান চাষীদের ত্রাণ বন্টনের ক্ষেত্রেও প্রকট।

Advertisment

সরকারি তথ্য অনুসারে হাওড়া, হুগলি, দুই পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত পান বোরজ, আম ও লিচুর প্রায় ২,৫০, ৫৫৬.১৭ হেক্টর চাষের জমি। এতে আনুমানিক ৬,৫৮১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। খাতায় কলমে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার জুনের প্রথম সপ্তাহেই ২০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ১ লক্ষ পান চাষীকে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাংক আ্যাকাউন্টে সরাসরি গিয়েছে ৫ হাজার করে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পৌঁছে গিয়েছিল হাওড়া উলুবেড়িয়া, পাঁচলা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায়। সেখানে ধরা পড়ল বাস্তবের ছবিটা অনেকটাই ভিন্ন। উলুবেড়িয়ার ৬৬ বছর বয়সী বিহারী গ্রাম পঞ্চায়েতের পান চাষী শ্যামসুন্দর ধারার কথায়, 'প্রথমে লকডাইন, পরে আমফান চাষের কাজে বড় ক্ষতি করেছে। আমরা শুনেছি রাজ্য সরকার সরাসরি ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছে। কিন্তু, দু'মাস হতে গেলেও আমি এক পয়সা সাহায্য পাইনি।' তাঁর অভিযোগ, 'পঞ্চায়েত দফতরে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখান থেকে আমাকে ত্রাণের আবেদন করতে দেওয়া হয়নি।'

আরও পড়ুন- বলুন দেখি কোন বাড়িটা আমফান ত্রাণ পেয়েছে?

Advertisment

এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক প্রতিনিধির বাড়ি থেকেও একই অভিযোগের প্রতিফলন শোনা গিয়েছে। অভিযোগ, শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে ত্রাণের টাকা মিলবে না। জেলা আলাদা হলেও এটাই যেন দস্তুর।

উদ্যান পালন দফতরের পরিসংখ্যান আনুসারে দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়ায় সব চেয়ে বেশি পান চাষ হয়। বছরে এখান থেকে প্রায় ১৩৬ লক্ষ মোট (এক মোটে থাকে ১০ হাজার পান পাতা) পান মেলে। অল বেঙ্গল পান পাতা কৃষক সমিতির এক্সিকিউটিভ সদস্য নারায়ণ দাসের কথায়, 'শ্রমিক ছাড়া রাজ্যে মোট পান চাষীর সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ।'

ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর কত পান চাষী এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন তার সরকারি তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে, পান চাষী শ্যামসুন্দর ধারার এওলাকায় বিহারী গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম নেতা স্বপন দাসের অভিযোগ, '৩৩৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক টাকা পেয়েছেন, তবে এর মদ্যে ৪০ শতাংশের বেশি জমির মালিক নন।' পাশের কালীনগর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিতোশ মেটের দাবি, 'শাসক দলের পঞ্চায়েত সদস্য প্রশান্ত সাঁধুখা ও তাঁর দুই ভাই ক্থিপূরণের অর্থ পেয়েছেন। যদিও তাঁদের কোনও পান বোরজ নেই।'

অভিযোগ পেয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল অভিযুক্ত প্রশান্ত সাঁধুখার বাড়িতে। তিন-তলা পাকা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রশান্ত সাঁধুখার ভাই দীপঙ্কর অভিযোগ খণ্ডণ করেছেন। তাঁর কথায়, 'সরকার যা টাকা দিয়েছে আমরা তাই নিয়েছি।' নথি বা উপযুক্ত প্রমাণ না দেখাতে পারলেও দীপঙ্করের দাবি দাদা প্রশান্তর পান চাষের জমি রয়েছে।

আরও পড়ুন- বহু পরিবারে ‘বাবা’ একই ব্যক্তি, রয়েছেন মৃতরাও, আমফান ত্রাণ তালিকা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ

উলুবেড়িয়ার পর প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিল পাঁচলা থেকে আরও ১৫ কিমি ভেতরে। ত্রাণের জন্য কার কতটা ক্ষতি হয়ে তা খতিয়ে দেখতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কমিটি তো দূরের কথা। কেই লাকায় আসেননি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষ ও বিরোধী দলের নেতাদের। এ প্রসঙ্গে কোনও জবাব দিতে চাননি পাঁচলার বিডিও এষা ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, 'ত্রাণের টাকা কারা পাবেন তার তালিকা বিডিও অফিস থেকে তৈরি হয়নি।' তবে পূনরায় আবেদন খতিয়ে দেখেই ত্রাণের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে।

স্থানীয় ফরওয়ার্ডব্লক নেতা ফরিদ মোল্লার বলেছেন, 'ব্লক অফিস তালিকায় ৯৯০ সুবিধাভোগীর নাম প্রকাশ করেছে। কিন্তু স্থানীয় ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৫০ জনের বেশি পান চাষী নেই। এর মধ্যে অবশ্য ১২০ জন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের নাম নেই।' স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ মুজিবর রহমানও ত্রাণ বন্টনে গড়মিলের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, 'দলের কতিপয় নেতা এই ধরনের কাজ করেছেন। দলের ভবমূর্তি এতে খারাপ হয়েছে।'

বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমফানের ক্ষতিপূরণ তাড়াতাড়ি দিতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছিল। তা ০.৫ শতাংশ। বামফ্রন্ট সরকার কাউকে কিছুই দিত না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে করি বলে অনেকে তা নিয়ে রাজনীতি করে গিয়েছে অনেক বেশি।”

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal amphan