'কেন্দ্র বললেও কার্ফু জারি করব না', সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে লকডাউন বহুলাংশে শিথিল হচ্ছে রাজ্যে। এদিন তিনি সাফ বলেন, "শব্দটা (কার্ফু) খুব বাজে লাগে শুনতে। মানুষকে এত দমবন্ধ করে রাখতে পারব না। খুব এমারজেন্সি ছাড়া আমরা কার্ফু জারি করি না। লকডাউন চলবে যেমন চলছে। কিন্তু আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব দয়া করে ৭ টার পর বাড়ির বাইরে থাকবেন না। কার্ফু আইন এখনই আমরা লাগু করছি না।"
রবিবার রাতেই কেন্দ্র লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে ১৪ দিন। সোমবার থেকেই লাগু হয়েছে চতুর্থ দফার লকডাউন। ৩১ মে অবধি আপাতত লকডাউনেই গোটা দেশ। সেই প্রেক্ষাপটে সন্ধে ৭টা থেকে সকাল ৭টা অবধি ‘নাইট কার্ফু’ জারি রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। যদিও এই নির্দেশ মানতে নারাজ মমতা। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ মতো ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে জারি অনেকাংশে শিথিল লকডাউন।
এদিন নবান্ন থেকে মমতা বলেন, "আগের লকডাউন আর এখনকার লকডাউনের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলি চলবে। প্রয়োজনীয় এবং অল্প প্রয়োজনীয় সার্ভিসও চলবে। ব্লক ধরে ধরে শহরে এবং গ্রামে আমরা কনটেন্টমেন্ট জোনকে তিনটে ভাগে ভাগ করেছি”। এগুলি হল- 'এ' অর্থাত্ এফেক্টেড জোন বা ক্ষতিগ্রস্ত জোন। এখানে করোনা সংক্রমণ হতে পারে বা হয়েছে। তাই বিধির কড়াকড়ি অনেক বেশি থাকবে। দ্বিতীয় হল, 'বি' অর্থাত্ বাফার জোন। এখানে সংক্রমণ নগণ্য, কিন্তু পাশাপাশি নজর রাখা হবে এই এলাকাতেও। তৃতীয় হল 'সি' তথা ক্লিন জোন। এখানে জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক থাকবে।
এদিন কেন্দ্রের সব নির্দেশে সুর মেলায়নি রাজ্যে। তবে কেন কয়েকদিন সময় নিলেন এই লকডাউন নির্দেশিকা ঘোষণা করতে তা ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, " আমরা একটু সময় নিলাম কারণ কেন্দ্রের নির্দেশিকা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তবে কিছুই জানানো হয়নি। তাই কনটেন্টমেন্ট-এফেক্টেড জোন ছাড়া ২১ তারিখ সব বড় দোকান খুলে যাবে। আর ২৭ তারিখ ফিরহাদ হাকিম, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, ডিজি, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুরসভার সচিবদের নিয়ে কমিটি হবে। তাঁরা ঠিক করবেন পরিবর্ত দিনে জোড়-বিজোর নীতি মেনে হকার্স মার্কেট খোলার বিষয়টি। একদিন জোড় এক দিন বিজোর এই ভাবে খোলা হবে দোকান। নাম্বারিং করে দেওয়া হবে। তাহলে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকবে। আবার জীবন-জীবিকাও চালু থাকবে। বড়-মাঝারি-ছোট দোকান খুলে যাবে ২১ তারিখ থেকে। স্যানিটাইজেশন, গ্লাভস, মাস্ক আবশ্যক। ফুটপাতের সব দোকান সেভাবেই খোলা যেতে পারে।"
মমতার এ দিন চতুর্থ দফার লকডাউনে বেশ কিছু ছাড় ঘোষণা করেছেন। এগুলি এক নজরে-
* ৩১ মে পর্যন্ত বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থায় ৫০ শতাংশ লোক নিয়েই কাজ চলবে।
* মলের ভিতর যে অফিস আছে সেটা খুলবে। তবে শপিং মল খুলবে না।
* হোটেল খুলবে সামাজিক দূরত্ব মেনে। রেস্তোরাঁ এখনই খুলবে না।
* বেসরকারি বাসদের বলব এই সময়টা মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত। আপনারা ভালভাবে বিষয়টিকে নিয়ে বাস চালান।
* অটোতে দু জন করে নেওয়া হবে। পুলিশ মিটিং করে ঠিক করে নেবে অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে।
* খেলা চলবে কিন্তু ভিড় করা যাবে না।
* সামাজিক দূরত্বের বিধির ক্ষেত্রে আগে সর্বোচ্চ ৭ জন থাকতে পারত কোনও অনুষ্ঠানে, তা বাড়িয়ে আমরা ১৫ জন করলাম। বিয়েবাড়ি থেকে অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য এটাই এখন নিয়ম।
* সেলুন, বিউটি পার্লার খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে। সব নিয়ম মানতেই হবে। যে যন্ত্র ব্যবহার করা হবে তা বারবার স্যানিটাইজ করতে হবে। কীভাবে স্যানিটাইজ করতে হবে তা একটি নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
* লকডাউনে বাড়িতে বসেই ঈদ পালন করতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা পয়লা বৈশাখও করতে পারিনি। কোনও রাজনীতি কোনও চক্রান্ত করতে যেন কেউ না পারেন এই বিষয় নিয়ে”।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন