কলকাতা থেকে সড়ক পথে নিজেদের চারচাকার গাড়ি নিয়ে দার্জিলিং যাওয়ার পথেই রাতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মালদায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী দম্পতি। ভেবেছিলেন মালদার কোনও একটি হোটেলে রাত কাটিয়ে পরের দিন দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। কিন্তু ঘটলো অবাক কাণ্ড! মালদা শহরের একাধিক হোটেলেও একটিও ঘর ফাঁকা নেই। কেন? খোঁজখবর করতেই সামনে এলো অদ্ভুত বিষয়। মালদা শহরের ঝলঝলিয়া এলাকার এক হোটেল মালিক জানান, একটিও ঘর ফাঁকা নেই। যাঁরা রয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই এবারের গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রার্থী। তবে কে কোন দলের বলতে পারবেন না। ঠিক এমন ভাবেই মালদা শহরের একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই উত্তরই এসেছে। শহরের নামী দামী কোন হোটেলের রুমই ফাঁকা নেই সবই নাকি বুক করা রয়েছে। ফলে শেষমেষ ঘর না পেয়ে কলকাতার ওই দম্পতিকে গাড়ি নিয়ে রাতেই মালদা ছেড়ে চলে যেতে হয়।
এবারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদার ১৪৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। ৬৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়ে রয়েছে। বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট এবং বিজেপি। পাশাপাশি মালদার ১৫ টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১০টি দখল করেছে তৃণমূল । ১টি পেয়েছে বিজেপি, ৪টি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। মালদা জেলা পরিষদের ৪৩ টি আসনের মধ্যে ৩৪ টি আসন একক সংখ্যায় দখল করেছে তৃণমূল, ৫টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস, ৪টি পেয়েছে বিজেপি।
এদিকে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে এবারে মালদায় ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা আসনগুলিতে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, নির্দল সবই মিলিয়ে মিশিয়ে রয়েছে। আর ওইসব পঞ্চায়েতগুলির দখল কে নেবে? তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক জল্পনা। আর তারই মধ্যেই প্রকাশ্যে পঞ্চায়েত সদস্যদের বোর্ড গঠনের আগে গা ঢাকা দেওয়ার বিষয়টি। যাদের মধ্যে অধিকাংশ ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অনেক জয়ী পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাহলে কি এবার বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে ঘোড়া কেনা-বেচার পালা শুরু হবে, এই প্রশ্নই বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তৃণমূলের জেলার সহ-সভাপতি তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর বাবলা সরকার বলেন, 'ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে অনেক নির্দলের জয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমরা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই অনড় থাকব। কোনওভাবেই অন্য দল থেকে জিতে তৃণমূলে এসে সুবিধা নেওয়া যাবে না। আসলে মালদা এবারে যেভাবে বিরোধী দলগুলি সন্ত্রাস চালিয়েছিল তাতে হয়তো ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার সদস্যরা বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের বাঁচাতে হোটেলে থাকতে পারেন। তবে ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা যেসব পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে, তাতে আমাদের দলের নির্বাচিত সদস্যরায় বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে দাবি জানাবে। সেই মতো তৃণমূলই এইসব ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত গুলিতে বোর্ড গঠন করবে।'
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু জানিয়েছেন, 'তৃণমূলীদের ভয়ে হয়তো অনেক পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রার্থীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করেছেন। কারণ , যেভাবে এবারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। পঞ্চায়েত গুলিতেও বিজেপি দলের নির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে বোর্ড গঠনের দাবি জানাবে।'
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক অর্জুন হালদারের কথায় , 'সন্ত্রাস করেও ওরা কংগ্রেসকে আটকাতে পারেনি। অনেক জায়গায় কংগ্রেস ভালো ফল করেছে। নিজেদের প্রাণভয়ের ক্ষেত্রে হয়তো এখন থেকেই হোটেল গুলিতে গা ঢাকা দিচ্ছে অনেক পঞ্চায়েত সদস্যরা বলেও শুনতে পেয়েছি। কারণ তৃণমূলের হুমকি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে হয় তো কেউ কেউ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। তবে ত্রিশঙ্কু থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে কংগ্রেস বোর্ড গঠন করবে।'