পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে 'নো ভোট টু মমতা' ধ্বনি তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেই ধ্বনিই শনিবাসরীয় বারবেলায় বারুইপুর থেকে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে তোলার আহ্বান জানান শুভেন্দু অধিকারী। এর জবাবে ভাঙড়ের বিধায়ক বলেছেন, 'আমি প্রথম দিন থেকে মমতা ব্যানার্জীর সমালোচনা করে আসছি। যে রাজনীতি উনি করছেন তার সমালোচনা করছি। এই পঞ্চায়েত ভোটেও সমালোচনা করছি, বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও মমতা ব্যানার্জীকে ভোট দিতে বারন করেছিলাম। আর কেমন ভাবে রাস্তা করব? এটা ওটা কথা বললেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। আমি শুরু থেকে বলেছি। আজও বলছি, মমতা ব্যানার্জীকে ভোট দেওয়া বাংলার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। মমতা ব্যানার্জীকে প্রত্যাখান করতে হবে। তিনি যত কম ভোট পাবেন বাংলার গণতন্ত্রের জন্য তত মঙ্গল হবে।'
ভোট পরবর্তী হিংসা ঘটেছে ভাঙড়ে। শুক্রবার নিজের বিধানসভা এলাকায় যাচ্ছিলেন বিধায়ক নওশাদ। কিন্তু, চেষ্টা করেএ যেতে পারেননি তিনি। ভাঙড়ের দিকে যাওয়ার সময় নওশাদ সিদ্দিকির গাড়িকে বাধা দেয় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। উর্দিধারীরা জানান, তাঁর ভাঙড়ে প্রবেশের অনুমতি নেই।
আরও পড়ুন- ছদ্মবেশে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করে শোরগোল ফেলেছিলেন, সেই মহিলার ওপরই হামলা! গ্রেফতার তৃণমূল নেতা
বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে ভাঙড়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? তা নিয়ে গাড়িতে বসেই পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন নওশাদ সিদ্দিকি। বিরোধী বিধায়কের প্রতি প্রশাসনের এহেন পদক্ষেপকে কীভাবে দেখছেন বিরোধী দলনেতা? উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'নওশাদ আগে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন। বিজেপিকে ওখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন উনি, প্রচারও করেছেন। আপনি আগে নিজে হাত খুলে দিন, তা হলে তো আমরা ভাঙড়ে যাব।'
এরপরই শুভেন্দুর আর্জি, 'নো ভোট টু মমতার স্লোগানও তাঁকেও তুলতে হবে।
বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়েই শনিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেছেন, 'শুভেন্দু অধিকারীকে আমি বিরোধী দলনেতার থেকেও তাঁকে আমি সারা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলে মনে করি। তাঁর কাজ, রাজ্যের যেখানে সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে, সংবিধান বর্হিভূত কাণ্ড হচ্ছে, মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, গণতন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানে গিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু ভাঙড়, ক্যানিং, আমতা নয়, সারা রাজ্যে তাঁকে যেতে হবে। সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ-সহ সামগ্রিক ভাবে সেই মানুষের হয়ে কথা বলতে হবে যাঁরা এই শাসকের অত্যাচারে অতিষ্ট।আমি তো প্রথম দিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনা করে আসছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রাজনীতি করছেন, তাঁর সমালোচনা করে আসছি। এই পঞ্চায়েত ভোটেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ভোট দিতে বারণ করেছি। বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁদের ভোট দিতে বারণ করেছি। আর কী ভাবে রাস্তা খুলব। এটা ওটা কথা বললেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। আমি শুরু থেকে বলেছি। আজও বলছি, মমতা ব্যানার্জীকে ভোট দেওয়া বাংলার জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। মমতা ব্যানার্জীকে প্রত্যাখান করতে হবে। তিনি যত কম ভোট পাবেন বাংলার গণতন্ত্রের জন্য তত মঙ্গল হবে।'
শুভেন্দু অধিকারী, নওশাদ সিদ্দিকি, উভয়ই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মুখর। কিন্তু, দিন কয়েক আগেই আইএসএফের সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের গোপন ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। দুই বিরোধী দলের তরফেই ওই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় শাসক তৃণমূলকে। পঞ্চায়েত ভোটের পর তৃণমূল বিরোধীতায় তাঁর অবস্থার নিয়ে বিরোধী দলনেতা প্রশ্ন তুলতেই তাই জবাব দিলেন নওশাদ। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।