শেষ এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নয়াড়ার টুইন টাওয়ার। কুতুব মিনারের চেয়েও উঁচু এই বহুতল বিল্ডিং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মাত্র ৯ সেকেন্ডে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। ১০ বছর ধরে নয়ডার ৯৩ এ সেক্টরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা টুইন টাওয়ার রবিবার দুপুর বেলা ভেঙে ফেলা হয়। এই টুইন টাওয়ার ভেঙ্গে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয় ৩৭০০ কেজি বিস্ফোরক। কুতুব মিনারের চেয়েও লম্বা এই জোড়া টাওয়ার ভেঙ্গে ফেলার কারণ নিয়ম না মেনে নির্মাণ করার। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই জোড়া টাওয়ার ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দেয়ছিল। যে দুটি বহুতল ভেঙে ফেলা হয় সেই দুটির মধ্যে একটির নাম অ্যাপেক্স, যার উচ্চতা ছিল ১০০ মিটার এবং অন্যটির নাম সিয়ানে, যার ছিল ৯৭ মিটার।
এই টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ফ্যাশন ভেঙে ফেলার পেছনে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার চেতন দত্তের নাম সবাই জেনেছেন। কিন্তু এর পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ভারত বাঙালি পাঁশকুড়ার মৃণাল ভৌমিক। মৃণাল ভৌমিক আই আই টি মাদ্রাজ থেকে সিভিল আর্থকুয়েক নিয়ে গবেষণারত। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার লক্ষ্যাকুড়ি র চাউল্যাকুড়ি গ্রাম থেকে নয়ডা পৌঁছানোর নায়ক মৃণাল ভৌমিক। বরাবরই মুখের মৃদু হাসি দিয়ে সবার সঙ্গে সুসম্পর্কের বন্ধন গড়ে তুলেছে। ভাঙতে কিছু শেখেনি। কিন্তু সেই মৃণাল এখন অবৈধ নির্মাণ ভাঙনের টিমে শামিল। মাদ্রাজ আই আই টি থেকে চারজনের টিমে একজন। মৃণাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বি টেক করার পর GATE দিয়ে NIT Rourkela থেকে M.Tech করেছে। তারপর এখন IIT MADRAS থেকে PhD করছে। আর Prime Minister's Research Fellowship scheme-এ সিলেক্ট হয়েছে। এখন Civil Earthquake এর উপর রিসার্চ করছে।
ফোনে মৃণাল জানিয়েছেন, এই ধরনের একটি বিল্ডিং যার একদিকে ৯ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে বসতি আর অন্যদিকে ৪ মিটার দূরেই তেল এবং গ্যাসের পাইপ লাইন যা সারা দিল্লি জুড়ে তেল ও গ্যাস সাপ্লাই হচ্ছে। এত বড় বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়লে পাশাপাশি মানুষের কি ক্ষতি হবে তার মেজারমেন্টের গুরুদায়িত্ব সামলানো এবং সাফল্যের সঙ্গে তা করা রীতিমত কঠিন। মৃণাল আরও জানিয়েছেন এটা একটা দলগত কাজ। একটি ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকার আইআইটি রুরকি এবং আই আই টি মাদ্রাজ যুক্ত ছিল। আমি আই আই টি মাদ্রাজ থেকে টিমের সঙ্গে ছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রবিবার পুরো বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলার আগে প্রায় চার মাস আগে একটি প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার কাজ করা হয়েছিল এই টুইন টাওয়ারের তিনটি ফ্লোরে বিস্ফোরক লাগিয়ে দেখা হয়েছিল পুরো বিল্ডিং ভেঙে ফেলতে কত পরিমাণ বিস্ফোরক লাগবে। আর বিস্ফোরণে সৃষ্টি হওয়া কম্পনের ফলে চারপাশে থাকা বিল্ডিং সহ নানা নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে। তার পর পুরো বিল্ডিং প্রতিটি কলাম লাগানো হয় প্রায় ৩৫০০ কেজি বিস্ফোরক। তারপর রবিবার দুপুরে সবাই সেই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে।
হরিনালের কথায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল আশেপাশের জনবসতির পাশাপাশি সারা দিল্লি জুড়ে তেল ও গ্যাসের সারপ্লাই দেওয়া পাইপলাইন বাঁচিয়ে কাজটা সম্পন্ন করা। আর সেই কাজ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। তাতে আমরা ভীষণ খুশি। ভারতবর্ষে এই প্রথম এই ধরনের বড় কোন বিল্ডিং জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে আর তার সাক্ষী থাকতে পেরে কিছুটা গর্ব অনুভব করছি। নয়ডার ৯৩ এ জোড়া এই টাওয়ারে ৯০০টি ফ্ল্যাট ছিল। যারা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি নির্মাতা সংস্থাকে ১২ শতাংশ সুদ দিতে হয়। এখানে রয়েছে দুটি আবাসন। যার মধ্যে একটি আবাসনের নাম হল অ্যাপেক্স। এর উচ্চতা হল ১০০ মিটার। অন্য আবাসনটির নাম সিয়ানে। এর উচ্চতা হল ৯৭ মিটার। ৪০ এবং ৩৯ তলা এই জোড়া আবাসন দুটি ভেঙে ফেলা হয় রবিবার দুপুর আড়াইটায়