বাড়িতে বাজি তৈরির সময় কোনওভাবে তা ফেটে গিয়েই বিস্ফোরণ ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর দাবি নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর, এমনই খবর পুলিশ সূত্রের। যদিও তৃণমূল নেতার বাড়িতে যে বাজি তৈরি হতো তা অবশ্য জানতেন না বলেই দাবি করেছেন প্রতিবেশীরা। আজ বিস্ফোরণে নিহত তিনটি দেহের ময়নাতদন্ত হতে পারে। বিস্ফোরণের তদন্তে ঘটনাস্থলে আজই যাবে ফরেনসিক দল। এদিকে, ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এযেন কার্যত খাগড়াগড়-কাণ্ডের ছায়া পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে যায় বাড়ির ছাদ। ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে তৃণমূল নেতা-সহ মোট তিনজনের। শুক্রবার রাতের সেই ভয়াবহতার পর মাঝে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। গোটা গ্রাম এখনও থমথমে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মজুত বোমা ফেটে বিস্ফোরণ নাকি বাইরে থেকে বোমা ফেলা হয়েছিল, তাও এখনও পরিষ্কার হয়নি।
ভূপতিনগরের অর্জুন নগর পঞ্চায়েতের নাড়ুয়াবিলা গ্রামে রবিবার থমথমে পরিবেশ। শনিবার কাঁথিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাইভোল্টেজ সভার ঠিক আগের রাতেই নাড়ুয়াবিলা গ্রামের তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি তুঙ্গে উঠেছে। বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে আচমকা এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে নিহত স্থানীয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না ও তার ভাই দেবকুমার মান্না ও প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ গায়েন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে স্থানীয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। রাজকুমারের সঙ্গেই ছিলেন তার ভাই দেবকুমার মান্না ও প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ গায়েন সহ অন্যরা। আচমকা বোমা বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে তাতে উড়ে যায় বাড়ির চাল। লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা বাড়ি। কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ পৌঁছে যায়। বিস্ফোরণে ঝলসে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ওই তিনজনের। স্থানীয়রা ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় আরও কয়েকজনকে স্থানীয় এগরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
আরও পড়ুন- আরও নামল পারদ, আজই মরশুমের সবচেয়ে শীতলতম দিন, জানুন আবহাওয়ার লেটেস্ট আপডেট
এদিকে, বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ভূপতিনগর থানার পুলিশ। তবে পুলিশ আসার আগেই তিনজনের দেহ লোপাট হয়ে যায় বলে অভিযোগ। কেউ বা কারা দেহ ওই এলাকা থেকে অন্যত্র নিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঝলসানো কয়েকটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই দেহের কারও মুণ্ড ছিল উধাও। কোনও মৃতদেহের আবার হাত ছিল না। শরীর ও পোশাক দেখেই প্রথমে পরিবারের লোকেরা দেহ শনাক্ত করেছে। বিজেপির অভিযোগ, মারাত্মক এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। শনিবার সকালে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধান জমির পাশে দু'জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তারও বেশ খানিকটা দূরে আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
সূত্রের খবর, মৃত তৃণমূল নেতা রাজকুমার মান্নার স্ত্রী লতারানি মান্না পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে বাজি তৈরির কারখানা ছিল। বাজি তৈরির সময় কয়েকজন কর্মী সম্ভবত ধূমপান করছিলেন। তা থেকেই বাজিতে আগুন ধরে গিয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও নিহত তৃণমূল নেতার বাড়িতে বাজি তৈরি হতো বলে জানতেন না তাঁরই প্রতিবেশীরা।
আরও পড়ুন- দু’বছর ভুয়ো শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চোখ কপালে পড়ুয়াদের
এদিকে ভূপতিনগরের বিস্ফোরণে এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, "ভূপতিনগরের তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত এবং দু'জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তৃণমূল নেতা রাজকুমার মান্না যখন তার বাড়িতে বোমা তৈরির কাজ করছিলেন তখন উচ্চ তীব্রতায় বিস্ফোরণ ঘটে। আমি চাই এর তদন্ত এনআইএ করুক।" এ বিষয়ে জেলা পুলিশ অমরনাথ কে জানান, তাঁরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। এলাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ''শাসকদলের মদতে পুলিশের সহযোগিতায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দিনের পর দিন অসামাজিক কাজে করে যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা নির্বিকার। প্রশাসন যদি কড়া হাতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দিনের পর দিন এই ধরনের অত্যাচার,অশান্তি হতেই থাকবে।''
যদিও বিজেপির তোলা এই অভিযোগ মানতে নারাজ কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি তরুন মাইতি। তিনি বলেন, ''গতকাল আমাদের সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমরা চাই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হোক।''